গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। গরুর মাংস তো অনেক খান কিন্তু গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে কি কিছু জানেন। ইনশাল্লাহ আজ আমরা আপনাদের এই সম্পর্কে জানব। এছাড়া থাকবে আজকের বাজারে গরুর মাংসের দাম সম্পর্কে। তো চলুন শুরু করি।
গরুর মাংসের মূল্য
বিশেষ কোন কারণ ছাড়া গরুর মাংসের দাম সারাবছর অপরিবর্তীত থাকে। তবে বিভিন্ন সামাজিক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান চলাকালে এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আজকের বাজারে গরুর মাংসের মূল্য ছিল হাড় সহ প্রতি কেজি মাংসের মূল্য ৬০০ টাকা থেকে ৬৬০ টাকা। এবং শুধু মাংসের মূল্য ছিল ৬৮০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা। কলিজা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। এখানে দামের ভিন্নতার কারণ হল অতিরিক্ত চর্বি থাকা। গরুর মাংস বলে মহিষের মাংস বিক্রয় করা । আপনি অবশ্যই মাংস কিনার আগে বাজার দেখে নিবেন। পরিচিত দোকান হলে আপনার জন্য অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন।
গরুর মাংসের প্রয়োজনীয়তা
দেহের সুস্থতার জন্য আমিষের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আর সেই আমিষের বৃহৎ ভাণ্ডার গরুর মাংস। বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত, গরুর মাংসে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ আছে, তা অন্য অনেক খাবারেই নেই।
তবে অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে পুষ্টিবিদরা জানিয়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী গরুর মাংস খাওয়া উচিত।
গরুর মাংসের পুষ্টিগুন
গরুর মাংসে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান রয়েছে। যেমন-জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন গরুর মাংসে রয়েছে ভিটামিন বি২, বি৩, বি৬ ও বি১২।
গরুর মাংস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পেশি, দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে এবং ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
এছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে গরুর মাংস । অতিরিক্ত আলসেমি-ক্লান্তি দূর করে কর্মোদ্যম রাখে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
গরুর মাংসের উপকারিতা
১. আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে। এগুলো হলো প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন।
২. গরুর মাংস শুধু শারীরিক বর্ধন নয়, বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন এবং রক্ত বর্ধনেও এটি ভূমিকা রাখে। ৩ আউন্স গরুর মাংসে আছে ৯-১৩ বছর বয়সী বাচ্চার দৈনিক চাহিদার ১২৫ শতাংশ ভিটামিন বি১২, ৯০ শতাংশ প্রোটিন, ৭৪ শতাংশ জিঙ্ক, ৪২ শতাংশ সেলেনিয়াম, ৩২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ৩২ শতাংশ আয়রন, ২৯ শতাংশ নায়াসিন, ২৩ শতাংশ রিবোফ্লেভিন এবং ১৬ শতাংশ ফসফরাস।
৩. গরুর মাংস খনিজ লবণের চমৎকার উৎস। এতে রয়েছে জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং বিপুল পরিমাণ লৌহ। গরুর মাংস গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনেরও উৎস। ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২ প্রভৃতি ভিটামিনের সরবরাহ পেতে পারেন গরুর মাংস থেকে।
৪. মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়। গরুর মাংসের প্রোটিন থেকে যে অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়, তা হাড় ও মাংসপেশির কাজে অনেক উপকার করে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
৫. জিংক আমাদের শরীরের কোষ রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। সাধারণত ৩ আউন্স পরিমাণ গরুর মাংস দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব।
গরুর মাংসের অপকারিতা
১. অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা থেকে পরবর্তীকালে আরো অনেক রোগের সূত্রপাত হয় এবং আপনার শারীরিক নানান ক্ষতি হতে পারে ।
২. সপ্তাহে যারা পাঁচ বেলা গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস খান, তাদের কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই আপনাকে নিয়ম মেনে পরিমিত মাংস খাওয়া উচিত।
৩. যারা নিয়মিত লাল মাংস খান তাদের মধ্যে ধূমপান, মদ্যপানসহ নানা বদভ্যাস গড়ে ওঠার সম্বাবনা থাকে। এতে বেড়ে যায় হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি।
৪. গরুর মাংসের অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা বাড়াতে সোডিয়াম সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. যারা নিয়মিত লাল মাংস খান তাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার হার শতকরা ১২ ভাগ বেশি। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংসে মৃত্যু ঝুঁকি তার চেয়েও বেশি, তাই পরিমিত খাবার চেষ্টা করুন। প্ৰয়োজন হয়ে মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
৬. অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে তা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া বেশি পরিমাণে গরুর মাংস খাওয়ার কারণে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
দৈনিক কতটুকু গরুর মাংস খাওয়া যায়
বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবীদের মতে গরুর মাংসের দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। তাই আপনার উচিত এই মাত্রার অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা।
আমাদের পরার্মশ
গরুর মাংস আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান যা আমাদের শরিরের নানান পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। আমাদের উচিত পরিমিত মাংস খাওয়া কেননা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে।
চলুন নিয়ম মেনে চলি সুস্থ থাকি। বাজার দর সম্পর্কে জানতে ভিজিট করতে পারেন