ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম ও হারাম নামসমূহ
১. আল্লাহর নাম নয় এমন নামসমূহ এর সাথে গােলাম বা আব্দ যোগে নাম রাখা হারাম
আল্লাহর নাম নয় এমন কোনো নামের সাথে গােলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন- আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক), আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক), আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক), আব্দুল মােত্তালিব (মােত্তালিবের দাস), আব্দুল কালাম (কথার দাস), আব্দুল কাবা (কাবাগহের দাস), আব্দুল নবী (নবীর দাস), গোলাম রসূল (রসূলের দাস), গােলাম নবী (নবীর দাস), আব্দুল আলী (আলীর দাস), আব্দুল হুসাইন (হােসাইনের দাস), আব্দুল আমীর (গভর্নরের দাস), গােলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস), গোলাম আবদুল কাদের (আবদুল কাদেরের দাস) গােলাম মহিউদ্দীন (মহিউদ্দীন এর দাস) ইত্যাদি।
তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘অব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয় । যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। আর যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শেয়।
এমনকি অনেক সময় আল্লাহর নামকে বিকৃত করে ডাকার প্রবণতাও দেখা যায়। এ বিকৃতির উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহকে হেয় করা তাহলে ব্যক্তির ইমান থাকবে না। আর এই উদ্দেশ্য না থাকলেও এটি করা অনুচিত। আল্লাহ তাআলার সাথে নির্দিষ্ট নামসমূহ দ্বারা নামকরণ করা হারাম। যেমন- খালেক, কুদ্দুস, অথবা যা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ছাড়া অন্য কারাে সাথে সংগতিপূর্ণ নয় তাও হারাম। যেমন মালিকুল মুলুক, সুলতানুস সালাতীন, হাকিমুল হুক্কাম ইত্যাদি । এ বিষয়ে সকল ফকীহ একমত ।
ইবনে কাইয়্যেম আল্লাহ তাআলার সাথে নির্দিষ্ট নামসমূহ উল্লেখ করেছেন- আল আহাদ, আস-সামাদ, আল খালেক, আর রায্যাক, আল-জাব্বার, আল- মুতাকাব্বির, আল আউয়াল, আল আখের, আল বাতেন ও আল্লামুল গুয়ুব। মালিকুল মুলকসহ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সাথে নির্দিষ্ট নামসমূহ দ্বারা নামকরণ হারাম হওয়ার দলিল হচ্ছে, ইমাম বুখারী ও মুসলিম উদ্ধৃত আবু হরায়রা রা.-এর একটি হাদীস ।
হারাম নামসমূহ ও নামকরণ এর প্রভাব
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হবে কারাে ‘মালিকুল আমলাক’ নামযুক্ত হওয়া।”(বুখারী ও মুসলিম)
সহীহ মুসলিম এর হাদীস আর যেসব সাধারণ নাম আল্লাহ তাআলা ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে প্রয়াগ করা তা দ্বারা নামকরণ করাও জায়েয। যেমন আলী, রশীদ ও বাদীউম ।
ইবনে আবেদীন বলেন : বাহ্যত তা জায়েয, যদিও (নির্দিষ্টসূচক) আলিফ-লাম দ্বারা চিহ্নিত থাকে। আল হাসকাফী বলেন : আমাদের অধিকার এর অর্থ হলো যা আল্লাহর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়। হাম্বলী মাযহাবের মত, যেসব নাম নবী স, ব্যতীত অন্য কারাে ক্ষত্রে প্রযােজ্য নয় তাদ্বারা নামকরণ করা হারাম। যেমন আদম সন্তানের নেতা, সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা), সাইয়্যেদুল কুল্ (সকলের নেতা) ইত্যাদি। কেননা এ জাতীয় নাম শুধু নবী করিম স. এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যেমনটি হাম্মলীগণ উল্লেখ করেছেন। (কাশশাফুল কিনা’ ৩/২৭; মাতালিবু আওলান নাহয়ী ২/৪৯৪ ।)
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে সাথে সম্বন্ধযুক্ত দাসসূচক সকল শব্দ দ্বারা নামকরণ করা হারাম । যেমন আবদুল উয্যা, আবদুল কাবা, আবদুদ্দার, আবদু আলী, আবদুল হুসাইন অথবা আবদু ফুলান (ওমুকের দাস)। এটি হানাফী, শাফিঈ্ ও হাম্বলী মাযহাবের অভিমত । মুগনী আল মুহতাজ গ্রস্থে এসেছে, আবদুল কা বা ও আবদুল উয্যা দ্বারা নামকরণ করা জায়েয নেই। তুহফাতুল মুহতাজ” এ বলা হয়েছে, শিরকের বিত্রান্তির কারণে আবদুন্নবী, আবদুল কাবা, আবদুদ দার, আবদু আলী অথবা আবিদুল হুসাইন নামকরণ হারাম । অনুরূপ ভয়ের আংশকা থাকায় জারুল্লাহ, রফীতুল্লাহ ও এ জাতীয় মন্দ নামকরণকে হারাম গণ্য করা হয়েছে।
হারাম নামসমূহ নিয়ে আরও কিছু মতামত
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে দিকে সম্বন্ধকৃত দাসসূলভ সকল শব্দ দ্বারা নামকরণ হারাম হওয়ার দলীল হলো, ইবনে আবী শায়বা বর্ণিত হাদীস । যা তিনি ইয়াযিদ ইবনে মিকদাম ইবনে শুরাইহ থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা হীনা ইবনে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন : ‘একদা নবী এর নিকট একটি গোত্র প্রতিনিধি আগমন করলাে। তিনি শুনতে পলেন তারা কাউকে আবদুল হাজার নামে ডাকছে। তখন তিনি জিঙ্গাস করলেন, তোমার নাম কি? সে বললো, আবদুল হাজার। এরপর রাসূলুল্লাহ তাকে বললেন, প্রকৃতপক্ষে তুমি আবদুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) । ইবনে কাইয়্যেম বলেন : যদি প্রশ্ন করা হয় কীভাবে তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসসূলভ নাম হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত হলেন? অথচ নবী স., থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত যে, তিনি বলেন : আবদুদ দীনার ও আবদুদ দিরহামের ধ্বংস হােক, আবদুল কামীছার ধ্বংস হােক, আবদুল কাতীফা এর ধ্বংস হােক।
তিনি আরও বলেন :”আমি মিথ্যা নবী নই, আমি আবদুল মুত্তালিব এর পুত্র”(১০১ বুখারী, হাদীস নং : ২৮৬৪) প্রশ্নের উত্তর হলাে, রাসূলুল্লাহ স. এর বাণী : আবদুদ দীনার ধ্বংস হোক দ্বারা নাম বুঝানো হয়নি; বরং যে ব্যক্তি নিজের অন্তরকে দীনারও দিরহামের গোলাম বানিয়ে ফেলেছে এর দ্বারা তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা ও তার প্রতি বদদোয়া দাসত্বকেই অধিক পছন্দ করেছে। তিনি মূল্য ও পোশাক-পরিচ্ছদ ও উল্লেখ করেছেন। আর এ দুটি হলো ভিতর ও বাইরের সৌন্দর্য ।
তাঁর বাণী ‘আমি আবদুল মুত্তালিব এর পুত্র নাম বিষয়ক নয়। বরং ব্যাপার হলো, সেই নামটি জানিয়ে দেয়া যাদ্ধারা ব্যক্তি পরিচিত, অন্য কেউ নয়। নিদিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় দেয়ার জন্য এরপ সংবাদ দেয়া হারাম নয় আর ইখবার (সংবাদ প্রদান) এর ক্ষেত্রে ইনশা (গঠন করা) এর তুলনায় অধিক বিস্তৃত ।
২. মানুষ যে উপাধির যোগ্য নয় সে নামে নামকরণ হারাম
মানুষ যে উপাধির উপযুক্ত নয় অথবা যে নামের মধ্য মিথ্যাচার রয়েছে অথবা অসার দাবী রয়েছে এমন নাম রাখা হারাম। যেমন- শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) বা মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম বা উপাধি হিসেবে নির্বাচন করা যেখানে অসার দাবী রয়েছে এমন নাম রাখা হারাম। যেমন- শাহেনশাহ (জগতের নাম রাখা। অর্থবােধক হওয়ার কারণে মহারাজ নাম রাখাকেও হারাম বলা হয়ছে। সাইয়্যেদুন নাস (মনবজাতির নেতা) নাম রাখা।
৩. যে নামগুলো অাল্লাহর জন্য খাস সে নামে নামকরণ হারাম
যে নামগুলো আল্লাহর জন্য খাস সেসব নামে কোন মাখলুকের নাম রাখা বা কুনিয়ত রাখা হারাম । যেমন- আল্লাহ, আর-রহমান, আল-হাকাম, আল-খালেক ইত্যাদি। তাই এসব নামে কোন মানুষের নাম রাখা সমীচীন নয় । পক্ষান্তরে আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে যেগুলাো শুধু আল্লাহর জন্য খাস নয়; বরং সেগুলো আল্লাহর নাম হিসেবেও কুরআন হাদিসে এসেছে এবং মাখলুকের নাম হিসেবেও এসেছে সেসব নাম দিয়ে মাখলুকের নাম রাখা যেতে পারে।
আল্লাহর কিছু নাম আছে তা একমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবহৃত হয়, যেমন রহমান, রাজ্জাক, বালেক ইত্যাদি সেগুলােতে কোনাে ক্রমেই কাউকে (আব্দ) শব্দ বাদ দিয়ে নাম রাখা বা ডাকা যাবে না। পক্ষান্তরে কিছু নাম রয়ছে যেগুলোে ‘আলিফ-লাম’ যুক্ত করে শুধু আল্লাহর জন্য প্রযােজ্য, আলিফ-লাম বাদ অন্যদের গুণবাচক নাম হতে পারে, যেমন রহীম, রাউফ, হামীদ ইত্যাদী। এমতাবস্থায় আল্লাহর নামের সাখে মিল রেখে কারও নাম রাখলে তখন অবশ্যই তার আগে (আব্দ) শব্দ উল্লেখ করতে হবে।
ইসলামে উত্তম নামের গুরুত্ব: নবজাতক শিশুর নামকরণ ও করনীয়
Google New Services: Decide in advance what will happen to your Google Account after death