ইসলামি দৃষ্টিকোণে শিশু
ইসলামি দৃষ্টিকোণে শিশু হচ্ছে উম্মাহর জন্য সৌভাগ্য ও মা-বাবার জন্য সুসংবাদ। আল-কুরআনে এসেছে- “হে যাকারিয়া! আমি তােমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি এক পুত্র সন্তানের, যার নাম হবে। ইয়াহইয়া, ইতঃপূর্বে আর কাউকেও এ নামধারী করিনি।” — (আল-কুরআন, সূরা মারইয়াম ১৯ : ৭)
শিশুসন্তান হচ্ছে চোখের প্রশান্তি। আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় বান্দাদের একটি বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তারা বলে- “ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী সন্তানদেরকে আমাদের জন্য নয়ন জুড়ানাে করে দিন।”– (আল-কুরআন, সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৭৪)
শিশুসন্তান পিতামাতার জন্য চির সুসংবাদ। আল-কুরআনে এ প্রসঙ্গ এসেছে। এভাবে-
“আর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা ইব্রাহিম আ. এর কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্যের দিকে তাদের হাত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল, ভয় পাবেন না।
আমরা লুতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। তার স্ত্রীও নিকটে দাঁড়িয়েছিল । সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবেরও।”–(আল কুরআন, সূরা হূদ ১১ : ৬৯-৭১)
১. ইসলামি দৃষ্টিকোণে নবজাতক শিশুকন্যা কিংবা ছেলে উভয়ই সমান।
নবজাতক শিশুকন্যা হােক কিংবা ছেলে উভয়ের জন্যই অভিনন্দন ও মােবারকবাদ জানানাে উচিত । আল কুরআনে এসেছে–
“আর এখন তােমরা তােমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং তােমাদের জন্য আল্লাহ যা কিছু দান করেছেন তা গ্রহণ কর।” –(আল কুরআন, সূরা আল বাক্বারা ২: ১৮৭)
কেননা ছেলে না হয়ে মেয়েসন্তান হওয়ায় অখুশি হয়ে যাদের মুখ মলিন হয়। আল্লাহ তা’আলা তাদের তিরস্কার করে বলেন, – “অথচ এদের কারাে কন্যাসন্তান হওয়ার সুসংবাদ হলে তাদের মুখমণ্ডল কালিমালিপ্ত হয়ে যায়। আর সে তখন শুধু ক্রোধের রক্ত পান করতে থাকে।” (আল কুরআন, সূরা আন নহল ১৬ : ৫৮; আল কুরআন, সূরা যুখরুফ ৪৩ : ১৭)
২. ইসলামের উপরই সকল শিশুর জন্ম।
প্রতিটি মানব সন্তানই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। আমরা যখন রুহ অবস্তায় ছিলাম তখন আমরা আল্লাহ একাত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। মহান আল্লাহ প্রশ্ন করেছিলেন- “আমি কী তােমাদের প্রভু নই” উত্তরে আমরা বলেছিলাম- “হ্যা ।
মহান আল্লাহর বাণী- “আর স্মরণ কর, যখন তােমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজদের উপর সাক্ষী করলেন “আমি কি তােমাদের রব নই’? তারা বলল, ‘হ্যা,’ আমরা সাক্ষ্য দিলাম।”(আল কুরআন, সূরা আরাফ, ৭: ১৭২)
এভাবে জন্মের পূর্বেই প্রতিটি মানুষ শিশু ইসলামের উপর থাকে । জন্মের সময় সে ফিতরাত তথা ইসলামের উপর জন্ম গ্রহণ করে।
হাদীসের বাণী- “হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রতিটি মানবশিশুই ফিতরাত তথা ইসলামী স্বভাবের উপরই জন্ম লাভ করে। তারপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদি বানায় বা খ্রিস্টান বানায় বা অগ্নিপূজারী।
বানায় ।”(ইমাম বুখারী, সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং : ১৩৫৯)
মূলত স্বভাবগতভাবেই শিশুরা ইসলামের স্বভাবের উপর ভাল মানুষ হিসাবেই জন্ম লাভ করে । কিন্তু পিতা-মাতা বা অভিভাবক যদি ইসলাম বিমুখ হয় এবং অনৈসলামী ধ্যান-ধারণা ও চাল-চলনে অভ্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে শিশু-সন্তানরা তাদের সেই ধ্যান-ধারণা ও চাল-চলনে এবং তাদের জীবনবােধে অভ্যস্ত হয়ে। গড়ে উঠে। অপর দিকে পিতা-মাতা এবং অভিভাবক যদি ইসলামের অনুসারী হয়, পবিত্র জীবনের ধারক হয়; তা হলে তাদের শিশু সন্তান তাদের নিকট থেকে ঈমান ও ইসলামের শিক্ষাই লাভ করবে।
শিশুরা তাদের পিতা-মাতা প্রদর্শিত ঈমানের পথেই তাদের অনুসরণ করবে। এমন পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ হচ্ছে- “যারা ঈমান এনেছে আর তাদের শিশু-সন্তানরাও ঈমানের সাথে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছ, আমি তাদের সেসব শিশু-সন্তানকে জান্নাতে তাদের সাথে একত্র করে দেব। আর আমি তাদের আমলের কোন কমতি করব না।”( আল-কুর’আন, সূরা আত্-তূর ৫২; ২১)