ইসলামিক ছোট গল্প : আজ আপনাদের তিনটি ইসলামিক ছোট গল্প বলব ইনশাআল্লাহ প্রথম গল্পটি হল এক সাহাবিকে নিয়ে যার মেহমানদারীতে আল্লাহ হেসেছিলেন। দ্বিতীয় টি হল সর্বশেষ জান্নাতি ব্যাক্তি নিয়ে এবং তৃতীয় গল্পটি হল ই হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) নিয়ে। আশা করি পুরো গল্পগুলো পড়বেন

তিনটি ইসলামিক ছোট গল্প এর প্রথম গল্প

যে সাহাবির মেহমানদারীতে আল্লাহ হেসেছিলেন…!

একটি সহীহ হাদীস থেকে নেয়া ঘটনা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এলেন। তিনি (খাদ্যের জন্য) তার স্ত্রীগণের নিকট পাঠান। তারা বলেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া আর কিছু নাই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কে তার মেহমানদারি করবে?

আনসারদের একজন বলেন, আমি। তিনি তাকে নিয়ে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মেহমানকে সম্মান করো। স্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েদের রাতের খাবার ছাড়া আমাদের আর কিছু নাই। আনসারী বলেন, তুমি খাবার তৈরি করো, বাতি ঠিক করো এবং তোমার বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন প্রবোধ দিয়ে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিও।

মহিলা তার খাবার তৈরি করলেন, বাতি ঠিকঠাক করলেন এবং তার বাচ্চাদের ঘুম পাড়ালেন। অতঃপর তিনি উঠে বাতি ঠিক করার ছুতোয় তা নিভিয়ে দিলেন। তারা এমন ভাব দেখালেন যে, তারা যেন মেহমানের সাথে আহার করছেন। অথচ রাতে তারা উপোসই থাকলেন।

ভোর হলে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট গেলেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপে হেসেছেন বা অবাক হয়েছেন এবং আয়াত নাযিল করেছেনঃ “তারা অভাবগ্রস্ত হলেও নিজেদের উপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম”। (সূরা হাশর : ৯)

আদাবুল মুফরাদ – ৭৪৫
হাদীসের মানঃ সহীহ
http://ihadis.com/books/adabul-mufrad/hadis/745

আল্লাহ আমাদেরকে উদার মনে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বেশি বেশি মেহমানদারী করার তাওফিক দান করুন।

খলিফা হারুন অর রশিদের গল্প

 

তিনটি ইসলামিক ছোট গল্প এর দ্বিতীয় গল্প

নবীজি বসে আছেন। সাহাবাগণ চুপচাপ তার আলোচনা শুনছেন। এক সময় নবীজির চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তিনি বললেন, আমি জানি কে সবার আগে জান্নাতে যাবে। এবং আমি এও জানি, জান্নাতে সর্বশেষ কে প্রবেশ করবে।

সাহাবাগণ উৎসুক হয়ে আছেন। কেউ সামান্য নড়াচড়া করছেন না। যেন একটু নড়ে উঠলেই কথার স্রোত বদলে যাবে! রাসূল সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললেন,
সর্বশেষ যে জান্নাতে যাবে, তাকে ডাকা হবে। তার সামনে কেবল তার ছোট ছোট পাপগুলো তুলে ধরা হবে। বলা হবে, তুমি কি অমুক দিন অমুক স্থানে এই এই পাপগুলো করোনি? সে মাথা নুয়ে ফেলবে। স্বীকার করবে। কিন্তু তার বড় বড় পাপগুলো তখনো আল্লাহ আড়ালে রেখেছেন। সেগুলো নিয়ে সে শঙ্কিত। পেরেশান। এত ছোট ছোট পাপও যদি আল্লাহ ধরেন, তাহলে বড়গুলো তো এখনো বাকি! কিন্তু আল্লাহ খুব দয়ালু। বড় ক্ষমাশীল। তিনি ফেরেশতাদের বলবেন, তোমরা তার এই পাপগুলো নেকিতে বদলে দাও। এবার বান্দা খুশিতে আটখানা হয়ে বলবে, ওগো আল্লাহ! আমার তো বড় বড় অনেক পাপ ছিলো। অগুলোরে যে এখানে দেখতেছি না।

তার এই কথা শুনে আল্লাহ হেসে ফেলবেন। রাসূলও হেসে ফেলেন। সাথে সকল সাহাবাও…

মুসনাদে আহমাদঃ ২১৪৩০, শামায়েলঃ ১৭১

মা নিয়ে চমৎকার দুইটি গল্প

তিনটি ইসলামিক ছোট গল্প এর তৃতীয় গল্প

আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের মুখে ইহুদিদের স্বরূপ………..!

লিখাঃ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী

‘ইহুদি মিথ্যাবাদী জাতি। আমি আলেমের পুত্র আলেম এবং সর্দারের পুত্র সর্দার। আপনি তাদেরকে ডেকে আমার কথা জিজ্ঞাসা করুন; কিন্তু আমার ইসলাম গ্রহণের কথা তাদের নিকট প্রকাশ করবেন না।’ এই স্বীকারোক্তি একজন ইহুদি বংশোদ্ভ‚ত সাহাবির। ইহুদি আলেম হিসেবেও তিনি ছিলেন সকলের নিকট সুপরিচিত। এই সাহাবির নাম হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। হজরত ইয়াকুব ইবনে ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর ইবনে সালাম (রা.) সেই মহান সাহাবি, যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে এসেছেন- এ খবর পাওয়া মাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর দরবারে উপস্থিত হন। তখন মদিনার লোকেরা দলে দলে হুজুর (সা.)-এর খেদমতে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
নবুওয়াতের দাবির সত্যতা যাচাই করার জন্য হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর মনে কতিপয় প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল পূর্বেই।

তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নূরানী চেহারা প্রথম দর্শনেই অনুভব করতে পারেন যে, সত্যিই ইনি আল্লাহর নবী-রাসূল; ইনি মিথ্যা দাবি করতে পারেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন উপস্থিত নও-মুসলিমদের মধ্যে ওয়াজ করছিলেন। ওয়াজ শ্রবণ করার পর কোনো প্রশ্ন না করেই হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) সেদিনকার মতো সেখান থেকে চলে যান। অত:পর দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কিছুক্ষণ একান্ত আলোচনাকালে এমন কিছু প্রশ্ন করেন, যেগুলোর জওয়াব নবী ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। হুজুর (সা.)-এর কাছ থেকে অত্যন্ত সন্তোষজনক জওয়াব পেয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর এতদূর বিশ্বাস হয় যে, তিনি আর কোনো প্রশ্ন না করে তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর জাতির পক্ষ থেকে সমূহ বিরুদ্ধাচরণের আশঙ্কা থাকা সত্তে¡ও হুজুর (সা.) এর প্রতি ঈমান আনতে তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত হননি।

ইসলাম গ্রহণের পর আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে যেসব কথা বলেন, তার অংশ-বিশেষ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অত:পর মহানবী (সা.) মদিনার ইহুদিদের ডেকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানান এবং তাদেরকে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) এর পরিচয় কি জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তারা বলেন, ‘তিনি আমাদের নেতা এবং নেতার পুত্র।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, ‘সে কি ইসলাম গ্রহণ করতে পারে?’ তারা বলল, ‘না, পারে না।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) এ সময় গৃহের কোণে আত্মগোপান করে ছিলেন। হুজুর (সা.) তাঁকে আহ্বান করলে তিনি কলেমা পড়তে পড়তে বের হয়ে নিকটে আসেন এবং ইহুদিদের লক্ষ্য করে বলেন; ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা ভালোরূপেই জানো, ইনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর ধর্ম সম্পূর্ণ সত্য অথচ তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান গ্রহণ করছ না।’

এতে ইহুদিরা অপ্রত্যাশিতভাবে অপমানিত বোধ করে এবং রাগে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর উদ্দেশ্যে বলতে থাকে ‘তুমি মিথ্যাবাদী এবং আমাদের দলের নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। তোমার পিতাও নিকৃষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তো দেখলেন, আমার এটাই আশঙ্কা ছিল।’

রাসূলুল্লাহ (সা.) উনাকে বেহেশতি হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছিলেন এবং কেউ কেউ বলেন যে, ‘আশারায়ে মোবাশশারা’ (বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত) ১০ জন সাহাবির পর একাদশ সাহাবি ছিলেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। হিজরি ৪৩/৬৬৩ সালের ৯ অক্টোবর তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর উদ্বৃত বাক্য মিথ্যাবাদী ইহুদিদের স্বরূপ উদ্ঘাটিত করে।

জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সাহাবী হযরত তালহা(রাঃ)ও তার স্ত্রীর কাহিনী।

ইসলামিক আরো গল্প পড়ুন

গল্পটি ইংরেজী ভাষায় পড়তে পারেন ListenTheStory.com