মা নিয়ে চমৎকার দুইটি গল্প : আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
প্রথম গল্প
মায়ের সম্মান নিয়ে হযরত আবু হোরায়রা (রা.) এর একটি ঘটনা!
একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রা.) রাসুল (সা.) এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সা.) বললেন, কেন তুমিকি কোন বেয়াদবী করেছ?
আবু হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (সা.) এর দরবার ছাড়বি।
আমি বললাম, ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না।
তখন রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বললেন, হে রাসূল (সা.) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে কেন এসেছ?
আবু হোরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সা.) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।”
রাসুল (সা.) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন আবু হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও।আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইতেছি এই কারণে যে, আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে।
হযরত আবু হোরায়রা দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি।
মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে।
হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সা.) এর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সা.) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মা সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।
পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। [তিরমিজি ]
খলিফা হারুন অর রশিদের গল্প
২য় গল্প
মায়ের দোয়ার এক চমৎকার ঘটনা
হযরত মুসা (আঃ) এর জামানার চমৎকার একটি ঘটনা।
হযরত মুসা(আঃ) একবার আল্লাহ্ তা’য়ালা কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্!
জান্নাতে আমার সাথে কে থাকবে? জবাবে বলা হলো,অমুক কসাই ! জবাবে কসাইয়ের নাম শুনে মুসা (আঃ) খুবই আশ্চর্য হলেন। অনেক খোঁজ করার পর মুসা (আঃ) তাকে বের করলেন।
দেখলেন, কসাই গোস্ত বিক্রিতে ব্যস্ত! সবশেষে কসাই একটুকরো গোস্ত একটি কাপড়ে মুড়িয়ে নিলেন । অতঃপর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। মুসা (আঃ) তাঁর সম্পর্কে আরো জানার জন্যে অনুমতি নিয়ে পিছুপিছু তাঁর বাড়ি গেলেন। কসাই বাড়ি পৌঁছে গোস্ত রান্না করলেন। অতপর রুটি বানিয়ে তা গোস্তের ঝোলে মেখে নরম করলেন। তারপর ঘরের ভিতরের কামরায় প্রবেশ করে শয়নরত এক বৃদ্ধাকে উঠিয়ে বসালেন । তারপর তার মুখে টুকরো টুকরো রুটি পুরে দিতে লাগলেন।
খাওয়ার পর বৃদ্ধা কি যেন কানেকানে বললেন। অমনি কসাই মুচকি হাসলেন। দূর থেকে মুসা (আঃ) সব-ই দেখছিলেন। কিন্তু, কিছুই বুঝলেন না। মুসা (আঃ) বৃদ্ধার পরিচয় এবং মুচকি হাসার বিষয়টি কসাইকে জিজ্ঞেস করলেন। কসাই বললেন, উনি আমার মা আমি বাজার থেকে আসার পর সর্বপ্রথম আমার মাকে রান্না করে খাওয়াই। আর, মা খাওয়ার পর খুশি হয়ে আমার কানের কাছে এসে আল্লাহ্ তায়া’লার কাছে এই বলে দোআ করেন, “আল্লাহ্ তায়া’লা তোমাকে বেহেস্ত দান করুক এবং মুসা (আঃ) এর সাথে রাখুক”! আমি এই দোআ শুনে এই ভেবে মুচকি হাসি যে, কোথায় মুসা (আঃ)আর কোথায় আমি।
ইয়া আল্লাহ আমাদের মন মানসিকতা, সেই কসাইয়ের মত করে দাও, আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদের মা বাবার খেদমত করার তাওফীক দান করেন । আমীন।