মূলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা : মূলা আমাদের বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি সবজি। মূলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে আসি মূলা সম্পর্কে
মূলার বৈজ্ঞানিক নাম: Raphanus sativus var. longipinnatus। মূলা (জাপানি: 大根, আক্ষরিক অর্থ “বৃহৎ মূল”; ইংরেজি: Daikon,Raphanus sativus var. longipinnatus, White Radish; চীনে: 白萝卜, আক্ষরিক অর্থ “সাদা গাজর
মূলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
মূলার পুষ্টি উপাদান
পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম কাবার উপযোগি কাঁচা মুলাতে পুষ্টি উপাদান নিন্মরুপ:
জলীয় অংশ ৯৫.৩ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, শর্করা ৬.৮ গ্রাম, প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, আঁশ ০.৮ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩২ কিলোক্যালরি, ভিটামিন বি ০.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩৫ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম, ক্যারটিন ৭ ইউনি, পটাসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১.৩ মাইক্রোগ্রাম, জিংক ০.৩ মিলিগ্রাম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ৩১ মিলিগ্রাম, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড ১৭ মিলিগ্রাম।
মূলার অন্যান্ন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কাঁচা মুলা খেলে কফ ও পিত্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাত, কাশি হিক্কা রোগের জন্য মুলা উপকারী।
- মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
- মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলিরুবিনের কমিয়ে তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে যা কিনা জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
- মূলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং নকম ক্যালরিযুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- অর্শের প্রধান কারণ হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ সব্জী মূলা খাদ্যের পরিপাক ক্রিয়াকে গতিশীল করে হজমে সহায়তা করে, যা অর্শ রোগের আশংকাকে নির্মুল করে দেয়।
- রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্ত দুষন এবং বর্জ্য পরিষ্কার করে থাকে।
- মুলা কিডনি রোগসহ মূত্রনালির অন্যান্য রোগে উপকারী।
- শ্বেত রোগের চিকিৎসায় মূলা ফলদায়ক। এন্টি কারসেনোজিনিক উপাদান সমৃদ্ধ মুলার বীজ আদার রস এবং ভিনেগারে ভিজিয়ে আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। অথবা কাঁচা মূলা চিবিয়ে খেলেও কাজ হবে।
- মুলার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে কফ, মাথাব্যথা, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- পোকামাকড়ের কামড় থেকে সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ে মুলার রস কার্যকরী।
- জ্বর এবং এর কারণে শরীর ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে অত্যন্ত উপকারী সব্জী মূলা।
- ত্বক পরিচর্যায়ও মুলা ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা মুলার পাতলা টুকরা ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ব্রণ নিরাময় হয়। এছাড়া কাঁচা মুলা ফেস প্যাক এবং ক্লিন্সার হিসেবেও দারুন উপকারী।
মূলার ১২টি ঔষধী গুনাগুণ
১. যাদের খাওয়ার রুচি খুব কম তারা ভাত বা রুটি খাওয়ার সময় কাঁচা মুলা টুকরা করে বা সালাদ করে খেলে হজম হয় খুব তাড়াতাড়ি। তার সাথে মুখের রুচি ও খিদে বেড়ে যায়।
২. টাটকা মুলার রস অর্শ নিরাময়ের একটি কার্যকর খাদ্য ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা অর্শ রোগে ভুগছেন তারা টাটকা মুলার রস ৬০-৯০ মিলিলিটার মাত্রায় সকাল বিকাল খান উপকার পাবেন।
৩. যারা জ্বরে ভুগছেন তারা নিয়মিত পরিমাণে মুলা খান জ্বর কমে আসবে মুখের রুচিও বাড়বে। জ্বর সারার গুণ মুলাতে আছে। তবে মনে রাখবেন জ্বর কোনো রোগ নয় অন্য কোনো রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
৪. মুলার পাতায় যথেষ্ট পরিমাণে নানা গুণ আছে। যাদের প্র¯্রাব কম হয় ও প্রস্রাব নির্গমনের সময় ব্যথা করে অথবা মূত্রথলির প্রচন্ড ব্যথা হয় তারা মুলা পাতার রস এক কাপ পরিমাণ বা ৭০-১০০ মিলিলিটার প্রতিদিন ১ বার করে ১৫ দিন খান সমস্যা কমে আসবে তার সাথে প্রস্রব ও পায়খানা পরিষ্কার হয়ে শরীরের ঘ্লানি বেরিয়ে আসবে।
৫. মুলা পাতায় প্রচুর আঁশ আছে তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন অর্থাৎ পায়খানা শক্ত হয় বা নিয়মিত পায়খানা হয় না তারা প্রতিদিন মুলা, মুলা শাক ও মুলার তরকারি খান উপকার পাবেন।
৬. ২ চামচ পরিমাণ মুলার পাতার রসের সাথে একটু সোডিয়াম বাই কার্বনেট মিশিয়ে খেলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয়। কোনো কারনে প্রস্রাব জমে থাকার কষ্ট দূর হয়। * শীতকালে কাঁচা মুলা খেলে খাবার সহজে হজম হয় ও শরীরের পুষ্টি হয় কাজে উৎসাহ বাড়ে।
৭. গুরুপাক খাবারের পর বা বেশী খেলে যাদের পেটে ব্যথা বা গ্যাস হয় তারা মুলার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খান সমস্যা কমে আসবে।
৮. স্বরভঙ্গ, হুপিং কাশি, ব্রংকিয়াল, গোলযোগ বা বুকের অন্য কোনো রোগে ১ চামচ তাজা মুলার রস সমপরিমানে মধু ও সামান্য লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন ২/৩ বার খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
৯. যেসব মায়ের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা নিয়মিত মুলা খান বুকে দুধের পরিমাণ বাড়বে শিশু পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে।
১০ যেসব মহিলার নিয়মিত মাসিক হয় না কোমরে বা পেটে ব্যথা হয় তারা নিয়মিত মুলা খান উপকার পাবেন।
১১. মুলার বীজ পিষে তার সাথে পেয়াজের রস মিশিয়ে শরীরে সাদা দাগ হলে তাতে তা লাগান এবং মুখের কালো দাগ (ছুলি বলে) হলে মুলার রসের সাথে মধু মিশিয়ে লাগান সেরে যেতে পারে।
১২. মৌমাছি অথবা যেকোন পোকা কামড়ের স্থলে মুলার রস লাগিয়ে দিন জ্বালা যন্ত্রণা ও ফোলা কমে যাবে। খাওয়ার আগে মুলা খেলে খাবার ভালো হজম হয় না। টক ঢেকুর ওঠে। পেটে গ্যাস হয়। তাই মুলা খাবেন কিছু খাওয়ার পর বা খাবারের সাথে। খাবারের পরে খাওয়া সবচেয়ে ভালো। মনে রাখবেন সব সময় কঁচি মুলা খাবেন। মুলা শক্ত হয়ে গেলে খাবেন না।
সতর্কতা:
যাদের থাইরয়েড গ্রন্থি, বুকজ্বলার সমস্যা আছে তাদের মুলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
পটলের পুষ্টিগুণ
Read this in English Radish Nutritional Properties And Benefits