১১, নবজাতক শিশু এর খাতনা করানাে।
শিশুর আরও একটি অধিকার হলাে শৈশবের প্রারম্ভেই সুন্নাতে খাতনা করানাে। এটা পিতা-মাতার ওপর সন্তানের হক। খাতনা সকল নবী-রাসূল আ.-এর সুন্নাত এবং ইসলামের প্রতীক।
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রলেন “পাঁচটি কাজ সুন্দর স্বভাবের মধ্যে গণ্য খাতনা করা, নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা, বগলের চুল উঠানাে, মােচ কাটা এবং নখ কাটা।” (ইমাম বুখারী, সহীহ বুখারী, কিতাবুল এসতি’যান, খণ্ড-৫, পৃ. ২২০৯, হাদীস নং ৫৫৫২।)
খাতনার সময় : সপ্তম দিন খাতনা করানাে সুন্নত। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) হাসান এবং হুসাইনের সপ্তম দিন আকিকা দিয়েছেন ও খাতনা করিয়েছেন। মূলত খাতনার বয়স জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকে শুরু হয়, তবে সাত বছর পুরাে হওয়ার আগেই তা সেরে নেয়া ভালাে, সাবালক হওয়ার পূর্বে খাতনা করা অবশ্য জরুরি।
ডাক্তারি বিদ্যা প্রমাণ করেছে যে, জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকে তিন বৎসরের মধ্যে খাতনা সম্পাদন করা উত্তম। খাতনার বিধানের ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, খাতনা সুন্নত। ইমাম শ্যাফিঈ, মালেক ও আহমদ রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, খাতনা ওয়াজিব।
এ ব্যাপারে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরাে কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেছেন, যে খাতনা করবে না তার ইমামতি ও সাক্ষ্য গ্রহণযােগ্য নয়। কাজি আয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, অধিকাংশ আলেমের নিকট খাতনা সুন্নত, এ সুন্নত পরিত্যাগ করা গােনাহ ।
১২. নবজাতক শিশু সন্তানকে ভালােবাসা
শিশুসন্তানের প্রতি পিতামাতার অকৃত্রিম ভালােবাসা আল্লাহ প্রদত্ত এবং সহজাত এতে কোনাে সন্দেহ নেই । আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মাতা-পিতার অন্তরেই সন্তানের প্রতি ভালােবাসা সৃষ্টি করেছেন ।
মাতা-পিতা মুসলিম হােক বা না হােক, কোনাে ধর্ম বা আল্লাহতে বিশ্বাসী হােক বা না হােক তাতে কোনাে তারতম্য নেই। কেননা, শিশুসন্তান হলাে মাতা-পিতার এক উষ্ণ মিলনের ফলশ্রুতি। পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব দুটো মহৎ অর্থ বিশেষ ।
যার মধ্যে আল্লাহ গচ্ছিত রেখেছেন। তাঁর করুণা ও ভালােবাসার কিছু নিদর্শন। তিনি পিতা-মাতার ওপর বর্ষণ করেছেন আপন দয়া ও কল্যাণের বারিধারা, যার কারণে তারা প্রাপ্ত হন পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং ধারাবাহিকতার অনুভূতি।
নবজাতক শিশু এর সম্পর্কে আল্লাহ কুরআন বলছে-
“আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এও একটি যে, তিনি তােমাদের হতে সৃষ্টি করেছেন তােমাদের জুড়ি যাতে তােমরা তার নিকট গিয়ে প্রশান্তি পেতে পার, আর তােমাদের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভালােবাসা ও করুণার সম্পর্ক।”( আল-কুরআন, সূরা আর রুম ৩০ঃ ২১)
কোনাে কোনাে তাফসীরকার আয়াতে উল্লিখিত ভালােবাসা ও করুণার দ্বারা সন্তান-সন্ততির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কেননা, এর মাধ্যমেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক মজবুত হয় এবং এ সম্পর্কের মধ্যে স্থিতিশীলতা আসে । মূলত স্বামী-স্ত্রীর আবেগ উচ্ছাসপূর্ণ প্রেম-ভালােবাসা পরিণতি ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এ সন্তানের মাধ্যমে ।
সন্তান হচ্ছে দাম্পত্য-জীবনের নিষ্কলুষ পুষ্পবিশেষ। তাই সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার ভালােবাসা অকৃত্রিম ও নিখাদ ও স্বভাবজাত । সন্তানের ভালােমন্দ সম্পর্কে পিতা-মাতা সর্বাধিক সচেতন হয়ে থাকেন। সন্তানের প্রতি তাদের যদি এ অকৃত্রিম ভালােবাসা না থাকত তাহলে বিশ্ব চরাচরে মানব অস্তিত্ব চিরদিনের জন্য নিঃশেষ হয়ে যেত । সন্তান-সন্ততি মাতাপিতার জন্য অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ অলঙ্কার এবং মানব সম্পদ বিকশিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম । সৎ সন্তান মাতাপিতার জন্য আশীর্বাদ ও আল্লাহর বিশেষ রহমত ।
কুরআনে এসেছে-“ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শােভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম । তােমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত হিসেবেও উৎকৃষ্ট |”(আল-কুরআন,সূরা আল কাহাফ ১৮ঃ৪৬)
ছােটদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার নির্দেশ ও বড়দের দেখানাের নির্দেশ সম্মান দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন- “সে আমার দলভুক্ত নয়, যে ছােটদের প্রতি স্বেহপরায়ণ ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় ।”-(ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস্ সিলাহ, বাবু মা জা’আ ফি রহমাতিস্ সিবইয়ান,
খন্ড ৪ পৃ.৩২১)
এছাড়া সনেহ ভালোবাসা পাওয়া শিশুদের অধিকার ( বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, প্রাগুক্ত, ধারা- ১৩০৫, পৃ ৮৪০,।)
“হযরত ‘আয়িশা রা, বলেন, “জনৈক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সা.-এর খিদমতে এসে বলল, আপনি কি শিশুদের চুমু দেন? আমরা তা কখনো শিগুদের চুমু দেই না। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, আল্লাহ যদি তােমাদের অন্তর থেকে দয়া মহব্বত ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন, তবে আমারই বা কি কুরার আছে?”(ইমাম বুখারী, সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯৮)
১৩. নবজাতক শিশু এর সঠিক লালন-পালন।
শিশু-সন্তান জন্ম গ্রহণের পর প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । হৃদয় নিংড়ানো ঐকান্তিক ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতার কোমল পরশে শিশুকে অতি যত্নসহকারে প্রতিপালন করা কর্তব্য।
পিতামাতার উচিত সন্তানদের প্রতিটি বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, তাদের যথাযথ পরিচর্যা করা, তাদের জন্য উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা এবং তাদের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ করা।
কুরঅআনে এসেছে- “সন্তান ও জননীর ভরণ-পােষণের ভার পিতার ওপরই ন্যস্ত ।”আল-কুরআন, সূরা আল বাকৃারা ২৪ ২৩৩।
পিতার নিকট সন্তানের অধিকার হচ্ছে তিনি তাদের তার খানাপিনা, থাকা ও পােশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা । বিশেষ করে যতদিন সে নিজস্ব ক্ষমতায় উপার্জন করতে সমর্থ না হয়। আর এটা না করলে পিতা ওনাহগার হবে।
নবজাতক শিশু এর প্রতি করণীয় বিষয়াদি সম্পর্কে মহানবী বলেন-
“যাদের ভরণ-পােষণের দায়িত্ব কারাে ওপর ন্যস্ত থাকে, সে যদি তা যথাযথভাবে পালন না করে তাদের ধবংস করে, তা হলে এতেই
তার বড় গুনাহ হবে ”
বস্তুত জন্ম হওয়ার পর থেকে সে উপার্জনক্ষম হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা পিতার দায়িত্ব। এ হলোা সন্তানের অধিকার।
প্রত্যেক পিতাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী সস্তানের ব্যয়ভার বহন করতে হবে। আইনের মাধ্যমে এ কাজ তাে বেশ কঠিনই হতোে, যদি না আল্লাহ তা’আলা পিতার অন্তর সন্তানের জন্য খরচ করার আবেগ সৃষ্টি করে দিতেন।
তাই দেখা যায়, পিতা কঠাোর পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে আয়-উপার্জন করেন তা ছ্বিধাহীন চিত্তে সম্তানের জন্য খরচ করে থাকন এবং সন্তানের হাসিমুখ দেখে প্রশান্তরচিত্ত তা মেনে নেন। তাছাড়া পিতামাতা সব সময় শিশুসন্তানের কল্যাণে সবকিছু করবে, সন্তানের কল্যাণকামী হবে, তাদের সৎ্পথে চালাবে। তাদের জন্য দু’আ করবে।
আল-কুরআনের বাণী, “হে প্রতভু! তুমি আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। প্রভু আমার, তুমি প্রার্থনা কবুল কর।”(আল-কুরআন, সূরা ইবরাহীম ১৪ :8০)
১৪. নামাযের আদেশ করা এবং বিছানা আলাদা করে দেওয়া
সন্তানকে বাল্যকাল থেকেই ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাত বছর বয়সে নামাযের আদেশ এবং দশ বছর বয়সে বছানা আলাদা করে দেয়া পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস, “হযরত ওমর ইবনে শুআইব তার পিতা, তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা, বলেন, তােমরা তামাদের সন্তানদেরকে সাত বছরে উপনীত হলে নামাযের আদেশ দাও। আর যখন তারা দশ বছরে উপনীত হয়, তখন তাদেরকে (নামায না পড়লে) প্রহার কর এবং বিছানা আলাদা করে দাও (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং : ৪৯৫)
১৫, ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা
সন্তান জন্মের পর পরিণত বয়সে মাতা-পিতার ওপর কর্তব্য হলাে সন্তানকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। সন্তান জন্মের সাথে সাথেই মা-বাবার প্রতি
প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব কর্তব্য পালন করতে হয় সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা,-এর একটি হাদীস থেকে জানা যায় যে- “হযরত আবু রাফি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সা, কে জিজ্ঞেস করলেন যে, সন্তানদের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য আছে কিনা, যেমনিভাবে আমাদের ওপর তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে?
উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা, বললেন- হ্যা, আর তাহলো কিতাব শিক্ষা দেওয়া, সাঁতার শিখানাে, ধনুক প্রশিক্ষণ ও যথাযথভাবে সম্পদের অংশীদার বানানো।”–( ইমাম অল বায়হাকী, সুনান আল বায়হাকী আল কুবরা, হাদীস নং ১৯৭৪২)
“পিতামাতার প্রতি সন্তানের অধিকার প্রধানত তিনটি- জন্মের পরই তার জন্য উত্তম নাম রাখতে হব, জ্ঞান বৃদ্ধি হলে তাক কুরআন শিক্ষা দিতে হবে।
আর সে যখন পূৃর্ণবয়স্ক হবে, তথন তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ইসলামে নামের বিধি-বিধান নামকরণ শব্দটি ‘নাম ধাতু থেকে উতদ্ভুত। বাংলায় নাম বলতে আখ্যায়, অভিধা, সংজ্ঞা, যে শব্দ দ্বারা কোন বস্তু বা ব্যক্তিকে নির্ধারণ করা যায় ইত্যাদি “–(বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং : ৮২৯৯।)
https://science-tech.us/technology/top-10-most-visited-websites/
ইসলামি দৃষ্টিকোণে শিশু সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন