৬. নবজাতক শিশু এর মাথা মুণ্ডন করে চুলসম দান করা
নবজাতক শিশু এর জন্মের পর সপ্তম দিনে মাথার চুল মুণ্ডন করা সুন্নাত । পিতা- মাতা সামর্থ্যবান হলে শিশুর মুণ্ডিত চুলের ওজন পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য গরিব-দুঃখীদের মাঝে সাদাকাহ করে দেওয়া মুস্তাহাব।
এ প্রসঙ্গে হাদীসের বাণী, “হযরত আলী ইবনে আবি তালিব রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সা. হাসান রা.-এর পক্ষে বকরি দ্বারা আকিকা করলেন এবং স্বীয় কন্যা ফাতিমাকে নির্দেশ দিলেন মাথা মুণ্ডন করতে এবং মাথার চুল সমপরিমাণ ওজনে রৌপ্য দান করতে।”( ইমাম তিরমিযী, জামিউত তিরমিযী, হাদীস নং : ১৫১২৯)
অন্য হাদিসে এসেছে
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শিশুর চুল মুণ্ডন করলে তার স্বাস্থ্য ভালাে থাকে, শক্তিশালী হওয়ার সুযােগ পায় এবং মাথার গঠন সুষম হয়। এর ফলে। শিশুর দর্শন, শ্রবণ, ঘাণ শক্তির ভারসাম্য রক্ষিত হয়। তবে শিশুর মাথার চুল কিছু অংশ কাটা ও কিছু অংশ রাখা কিংবা মাঝখান থেকে কাটা বা চারদিক দিয়ে কাটা এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে।” (ইবনে কইয়্যিম, তুহফাতুল মাওলুদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬৮)
শিশুর এ মাথা মুণ্ডনের কাজটি আকীকার পূর্বেই করতে হবে । হাদীস শরীফে নবজাতকের মাথার চুলকে তার জন্য কষ্টদায়ক বস্তুরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই তা ফেলে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আকীকার পশুর রক্ত দ্বারা নবজাতকের মুণ্ডিত মস্তক রঞ্জিত করে নেওয়ার প্রথাকে রাসূল সা. অপছন্দ এবং নিষিদ্ধ করেন। অবশ্য রক্ত রঞ্জিত করার পরিবর্তে মস্তকে জাফরান প্রভৃতি সুগন্ধি মাখা সুন্নাত।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন হযরত হাসান ইবন আলী ভূমিষ্ঠ হন তখন রাসূলুল্লাহ সা. তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দিয়েছিলেন। হযরত আবু রাফে রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখেছি, তিনি হাসান ইবনে আলী রা.-এর কানে আযান দিয়েছিলেন যখন হাসান রা. হযরত ফাতিমা রা.-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।-(১৮ ইসলামী আইন বিধিবদ্ধকরণ বাের্ড, প্রাগুক্ত, ধারা-১২০১, পৃ ৮৩৫।)
৭. শিশুর সুস্থ শারীরিক বিকাশের লক্ষ্যে দুধ খাওয়ানাে
করুণাময় আল্লাহ তা’আলা মানব শিশু সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার লালন-পালনের যাবতীয় ব্যবস্থা তিনিই করেন । নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকে দুধ সৃষ্টি করে রাখেন যা হালকা মিষ্টি ও উষ্ণ । যা নবজাতক শিশুর নাজুক অবস্থার উপযােগী। তাই শাল দুধ শিশুকে খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর মধ্যে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা ও শরীর গঠনের প্রচুর উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। -(* মাওলানা আমীনুল ইসলাম, তাফসীরু নূরুল কুরআন, খণ্ড-২, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯০, )
মায়ের দুধপানের মাধ্যমে মা-শিশুর অকৃত্রিম বন্ধন তৈরি হয়। মায়ের সঙ্গে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক সংযােগ সৃষ্টি হয় এবং শিশুর চরিত্র গঠনেও এর প্রভাব বিশেষভাবে সহায়ক। তাই শিশুকে শালদুধসহ বুকের দুধ পান করানাে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে শালদুধ দেওয়া উচিত। দুধপান সম্পর্কে কুরআনের বাণী, “আমি তাে মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি, তার মাতাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে, এর পর তার দুধ ছাড়ানাে হয় দুই বছরে।”(আল-কুরআন, সূরা লুকমান ৩১: ১৪।)
অন্য আয়াতে ঘােষিত হয়েছে- “আমি মূসার মাকে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলাম, তাকে দুধপান করাও।”( আল-কুরআন, সূরা আল কাসাস ২৮ : ৭)
৮.নবজাতক শিশু নাম রাখা
শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা সুন্নাত । হাদীসের বাণী- “হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন, প্রত্যেক নবজাত শিশু তার আকীকার নিকট বন্দি, তার জন্মের ৭ম দিবসে তার নামে পশু জবাই করতে হবে, তার নাম রাখতে হবে এবং তার মাথার চুল মুণ্ডন করতে। (ইমাম ইবনে মাজাহ, সুনান ইবনি মাজাহ, হাদীস নং ৩১৬৫)
৯. আকীকা করা
নবজাতক শিশুর ইসলামসম্মত নাম রাখার পর পিতা-মাতার কর্তব্য হলাে আকীকা করা । আকীকা বলা হয় পুত্রসন্তানের জন্য দুটি আর মেয়েসন্তানের জন্য একটি পশু কুরবানি করা । আকীকার দ্বারা সন্তানের ওপর থেকে বালা-মুসিবত দূর হয়ে যায় । দানশীলতার বিকাশ ঘটে। গরিব-মিসকীন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর হক আদায় হয়। সামাজিক বন্ধন, পরস্পর হৃদ্যতা ও সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা করা সুন্নাত ।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন- “সালমান ইবনে ওমর আদদ্ববিঈ রা. বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, শিশু জন্মগ্রহণ করার সাথে সাথে আকীকা করা কর্তব্য এর মাধ্যমে রক্ত ঝরাও আর সে শিশু থেকে পঙ্কিলতা দূর কর।”( ইমাম বুখারী, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১৫৪)
সামুরা ইবন জুনদুব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ আলাইহি ঘােষণা করেন যে, “নবজাতক শিশু নিজ আকীকার সাথে বন্ধক থাকে, তার জন্মের সপ্তম দিন তার নামে একটি আকীকার পশু যবেহ করবে।”(ইমাম তিরমিযী, জামিউত তিরমিযী, হাদীস নং ১৫২২)
অন্য হাদিসে এসেছে
হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে আদেশ করেছেন- “আমরা যেন ছেলে-সন্তানের জন্য দুটো ছাগল আর মেয়েসন্তানের জন্য একটি ছাগল আকীকা করি।”( ইবন মাজাহ, সুনান ইবনি মাজাহ, হাদীস নং ৩১৬২।)
সামর্থ্যবান হলে এবং সম্ভব হলে শিশুর জন্মের সপ্তম দিবসে আকীকা করা উত্তম। শিশুর জন্ম ও তার আকীকার মাঝে সময়ের একটু ব্যবধান হওয়া
দরকার । কেননা নতুন শিশুর জন্ম লাভের ব্যাপারে ঘরের সকলের জন্যই বিশেষ ব্যস্ততার কারণ হয়ে থাকে। এ থেকে অবসর হওয়ার পরই আকীকার প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে । আকীকা সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চতুর্দশতম বা একবিংশতম দিবসে করা যেতে পারে । তাও সম্ভব না হলে যে কোনাে দিন সম্ভব হয় করা যাবে।-(মুস্তাদরাকে হাকিম, বৈরুত, দারুল কিতাবু আল আরাবী, খণ্ড-৪, পৃ. ২৩৯।)
১০. কালিমা শিখানাে
শিশু যখন কথা বলতে শেখে তখন তাকে সর্বপ্রথম কালিমায়ে তাইয়্যিবা শিক্ষা দেবে । যার প্রভাব তার সমগ্র জীবনে প্রতিফলিত হওয়ার আশা করা যায় । তাছাড়া জীবনের উষালগ্নেই শিশুকে নিজ সৃষ্টিকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সেই সৃষ্টিকর্তা যে শরীকহীন, তাঁর কোনাে অংশীদার নেই, তিনি একক ও অদ্বিতীয় এ পরিচয় দিয়ে দেওয়া প্রত্যেক পিতামাতা ও অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব।
এ বিষয়ে মহানবী (সা.)বলেন- “তােমরা নিজ নিজ শিশুকে সর্বপ্রথম কথা শেখাবে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”-(বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং : ৮২৮২।)
https://science-tech.us/technology/whatsapp-secret-chat-leaks/
Facebook is now an organization of Meta Company
মহাকাশযান লুসি:ট্রোজান গ্রহাণুর দিকে উড়ে গেল