১. নবজাতক শিশু এর উদ্দেশ্যে দু’আ ও উপঢৌকন পাঠানো।
নবজাতক শিশু সন্তান ভূমিষ্ঠের পর নবজাতকের উদ্দেশ্যে তার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং উত্তম মানুষ হওয়া কামনা করে দু’আ করতে হবে। নবজাতকের জন্য উপহার উপঢৌকন দেওয়াও একটি উত্তম ব্যবস্থা। বস্তুত জন্মের সুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার অধিকার প্রত্যেক শিশুরই রয়েছে। অর্থাৎ কারাে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার উচিত আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সেই সংবাদ প্রদান করা এবং প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের উচিত যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাকে অভিনন্দন জানান ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা।
এ প্রসঙ্গে নিমােক্ত আয়াত প্রণিধানযােগ্য-. “আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এলাে। তারা বলল : সালাম, সেও বলল, সালাম । সে অবিলম্বে এক কাবাব করা গাে-বৎস আনল । সে যখন দেখল তাদের হাত সেগুলাের দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করল এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতির সঞ্চার হলাে। তারা বলল, ভয় করাে না, আমরা নূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি । তখন তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে রইল এবং সে হাসল । অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম।”(আল কুরআন, সূরা হূদ-১১ : ৬৯-৭১)
“হে যাকারিয়া! আমি তােমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি এক পুত্র সন্তানের, যার নাম হবে ইয়াহইয়া, ইতঃপূর্বে আর কাউকেও এ নামধারী করিনি।” — (আল-কুরআন, সূরা মারইয়াম ১৯ : ৭)
২. নবজাতক শিশু কে উত্তমরূপে গােসল করিয়ে পাক-পবিত্র করা
শিশু জন্মের পরপরই তাকে উত্তমরূপে গােসল এবং শরীরে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। নাভী কাটা থেকে শুরু করে সব ব্যাপারেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শীতকালে গােসল করানাের সময় খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন তাকে ঠাণ্ডায় আক্রমণ করতে না পারে। গােসলের সময় যাতে নাক, কান ও মুখে পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গােসলের পরপরই শরীর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে এবং আবহাওয়া অনুযায়ী নরম কাপড়-চোপড় পরাতে হবে ।
নবজাতক বেশি আলােকোজ্জ্বল স্থানে রাখা যাবে না। এতে শিশুর চোখের জ্যোতি হ্রাস পেতে পারে। শিশুকে এক পাশে বেশিক্ষণ শুইয়ে রাখা বা কোনাে একদিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকতে দেওয়া যাবে না। শিশুকে একা ঘরে রেখে কোথাও যাওয়া ঠিক
হবে না। এতে অবাঞ্চিত কোনাে ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে ।
৩. নবজাতক শিশু এর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়া
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই শিশুর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত ধ্বনি শােনান কর্তব্য। অর্থাৎ আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। হাদীসে এসেছে,“হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে আবু রাফে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা রা. যখন ইমাম হাসান রা. কে প্রসব করলেন তখন “রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কানে সালাতের আযানের মতাে আযান দেন।”(ইমাম তিরমিযী, হাদীস নং ১৫১৪)
ইমাম বাইহাকী ও ইবনে আনাসী রহ. হযরত হুসাইন ইবনে আলী রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সা, ঘােষণা করেছেন “কোনাে ব্যক্তির যখন শিশুসন্তান জন্মগ্রহণ করে তখন যদি তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত ধ্বনি শােনানাে হয় তবে সে শিশুর বিশেষ ধরনের রােগ তথা জিনের প্রভাব থেকে নিষ্কৃতি পায়।”–( আবু বকর আহমদ বিন আল হুসাইন আল বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং : ৮২৫৪)
৪. তালকীন’ দেওয়া :জন্মের পরপরই সন্তানকে ইসলামি কালিমা শুনানাে
জন্মের পর পরপরই সন্তানকে ইসলামি কালিমা শুনানাে অর্থাৎ আযান ও ইকামত শােনানাের মাধ্যমে সন্তানকে পৃথিবীর আলােয় আসার সাথে সাথেই তার কর্ণকুহরে আল্লাহ তা’আলার প্রভুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্বের বাণী এবং কালিমায়ে শাহাদাতের বাণী শুনিয়ে ইসলামের ছায়াতলে আসার আহ্বান জানানাে । এ যেন ইসলাম গ্রহণের ‘তালকীন’ দেওয়ার মহড়া যেমন মুমূর্য ব্যক্তির মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তার কানে কালিমায় তাওহীদের ‘তালকীন’ দেওয়া হয়।-(ইবনুল কাইয়্যিম, তুহফাতুল মাওলুদ, কয়রাে, মাকতাব ওবাইদুল্লাহ কুর্দী, তাবি, পৃ ৫৬৭)
আযান ও ইক্বামতের বাণী শােনানাের উপকার হচ্ছে এতে শয়তান দূরে সরে যায়। তাছাড়া এর মাধ্যমে নবজাতকের ইসলামের আহ্বান প্রথমেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আমন্ত্রণ জানানাে হয় । কেননা, ইসলামের স্বভাব ধর্মেই তার জন্ম এবং দুনিয়ার জীবন তাকে এ ইসলামেরই আলােকে পরিচালিত করতে হবে। এভাবে নবজাতককে প্রথম হতেই ইসলামের শাশ্বত জীবনবােধ, প্রত্যয় ও আকীদার ওপরে প্রতিষ্ঠা করা এবং শয়তান ও অন্যান্য মতবাদের বেড়াজাল থেকে বের করে খাঁটি আল্লাহর বান্দা হওয়ার আহ্বান করা হয়।( ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত, খণ্ড-৩, পৃ. ১৬৮৯, হাদীস নং ২১৪৪)
৫. তাহনীক করার মাধ্যমে মুখের জড়তা দূর করা
নবজাতক শিশু ভূমিষ্ঠ হলে ইসলামি শরী’আয় যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে তাহনীক করা অন্যতম। তাহনীক মানে হচ্ছে পাকা খেজুর চিবিয়ে তার মিষ্টি রস আঙ্গুলের মাথায় নিয়ে ধীরে ধীরে শিশুর মুখে দেওয়া ।
যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য যেমন : মিছরি, চিনি, শিরা, কিংবা মধু দেওয়া যায়। এতে নবী করীমের সুন্নাত পালন করা হয়। এর ফলে শিশুর বন্ধ মুখ খুলে যাবে এবং শিশুর মুখের নড়াচড়ার মাধ্যমে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে । কিছু পেটে গিয়ে শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে ।