১. অশুভ বা নেতিবাচক মনে করা হয়, এমন অপছন্দনীয় নাম না রাখা
নেতিবাচক ও অশুভ মনে করা হয় এমন সব শব্দ দ্বারা নামকরণ করা মাকরহ তানযীহি বা অপছন্দনীয় নাম। যেমন- রাবাহা (লাভ), আফলাহ (সফল), নাজাহ (কৃতকার্য), ইয়াসার (স্বচ্ছলতা) এ জাতীয় নাম। এ নাম ও তার অনুরূপ নামসমূহ থেকে নেতিবাচক ও অশুভ লক্ষণ মনে করা হয়। পুত্রের নাম রাবাহা (লাভ) রেখেছে এমন ব্যক্তিকে যদি প্রশ্ন করা হয় তোমার কাছে কি রাবাহা (লাভ) রয়েছে? সে বলবে, না বাড়িতে লাভ নেই। বস্তুত এটি অশুভ মনে করার রাস্তা তেরী করে দেয়া।
ইমাম মুসলিম তার সহীহ হযরত ছামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে উদ্ধৃত করে ‘তােমার সন্তানের নাম ইয়াসার (স্বচ্ছলতা), রাবাহা (লাভ), নাজীহ (সফল) বা আফলাহা (অধিক কৃতকার্য) রেখাে না। কারণ তুমি যদি বলাে, অমুক কি আছে? সে না থাকায় (উত্তর দাতা) বলবে, নেই। হাদীসটি ইমাম মুসলিম উদ্ধৃত করেন (৩/১৬৮৫, আল হালবী)
হযরত জাবের রা. থেকে বার্ণিত, ‘একদা রাসূলুল্লাহ স. ইয়ালা (শ্রেষ্ঠ) বারাকাহ (বরকত), আফলাহ (সফল), নায (উপকারী) এ জাতীয় অন্যান্য নামকরণ করা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন। পরবর্তীতে আমি তাকে এ বিষয়ে চুপ থাকতে দেখেছি। তিনি কিছুই বলেননি।
অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তা নিষেধ করেননি। এরপর হযরত ওমর রা, তা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। পরবর্তীতে নিষেধ না করে চুপ থেকেছেন। ( আল-মাওসুআ আলফিকহিয়া আলকুয়েতিয়া, পৃষ্ঠা-১১/৩৩৩)
আর যদি আল্লাহর নাম উদ্দেশ্য না হয়ে লোকটির কোানাে গুণ হিসেবে নাম রাখা হয়, তখন তাকে এসব নামে (আব্দ) শব্দ উল্লেখ করা ব্যতীতই ডাকা যাবে।
২. যে সকল নাম মানুষ অপছন্দ করে
আর সেসব নাম মাকরুহ যা মানুষ অপছন্দ করে এবং যা থেকে বিরক্তির উদ্রেক হয়। যেমন : হারবুন (যুদ্ধ), মুররাতুন (তিক্ত), কালবুন (কুকুর), হাইয়্যাতুন(সাপ)-(শারহুল আযকার ৬/১১১ )
মালেকীগণ স্পষ্ট বলেছেন, মন্দ সকল নামই নিষিদ্ধ। ‘মাওয়াহিবুল জলীল গ্রন্থকার বলেন : হারব (যুদ্ধ), হু্যুন (দুশ্চিন্তা) ও দিরার (ক্ষতি) ইত্যাদি খারাপ নাম নিষিদ্ধ। ইমাম মালেক ‘আল-মুয়াত্তা’ গ্রন্থে ইয়াহইয়া বিন সাঙদ রা. থেকে উদ্ধৃত করেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ স. একটি দু্ধবর্তী গাভী প্রসংগে বলেন : কে এ দুধ দোহন করবে? এক ব্যাক্তি দাড়ালো । রাসূলুল্লাহ স. তাকে জিজ্ঞেস করলেন- তােমার নাম কি?
সে বললো, মুররাহ (তিক্ত) এরপর রাসূলুল্লাহ স. তাকে বললেন বসাে, অতঃপর বললেন- কে এর দুধ দোহন করবে? আরেক ব্যক্তি দাঁড়ালাে রাসূলুল্লাহ এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন- তোমার নাম কি? সে বলল হারবুন (যুদ্ধ) তাকেও বললেন, বসো। তিনি আবার বললেন কে করবে? আরেক ব্যক্তি দাড়ালাে রাসূলুল্লাহ সা তােমার নাম কি? সে বললা, য়াঈল । এরপর রাসূলুল্লাহ তাকে বললেন, তুমি দুধ দোহন করাে। (মুগনী আল-মুহতাজ ৪/২৯৪)
‘মুগনী আল-মুহতাজ শয়তান, জালেম, শিহাব (অগ্লিশিখা), গাধা, কুকুর ইত্যাদি হাম্বলীগণের মতে, অহংকারীদের নামে নামকরণ করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। যেমন- ফেরাউন ও শয়তানদের নামসমূহ। মাতালবু আওলা ন্নাহয়্য গ্রন্থে এসেছে হারবুন (যুদ্ধ) শব্দে নামকরণ করা অপছন্দনীয়।
৩ ফেরেশতার নামে নামকরণ
অধিকাংশ আলেমের মতে, জিবরাঈল, মিকাঈল ইত্যাদি ফেরেশতার নামে নামকরণ করা দোষণীয় নয়। তবে ইমাম মালেক এরূপ নামকরণ অপছন্দ করেছেন। ইমাম মালেককে জিবরাঈল আ.-এর নামে নামকরণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল । তিনি তা অপছন্দ করেছেন। কাজী আয়াজ বলেন : কিছু আলেম ফেরেশতাদের নামে নামকরণকে উত্তম বলে মনে করেন। এটি হারেস বিন মিসকিন এর আর বাকীরা একে মুবাহ বলেছেন।
৪. ভদ্রতা ও শালীনতা পরিপন্থী নাম
যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুযের স্বাভাবিক রুচিবোধ যেসব শব্দকে হিসেবে ঘৃণা করে; ভুদ্রতা ও শালীনতার পরিপস্থা কোন শব্দকে নাম বা কৃনিয়ত
হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।
যেসব নামের মধ্যে আত্মাস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারর (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্তা উল্টো। অনুরূপভাবে রাসূল। এক মহিলা সাহাবীর নাম বারা (পুণ্যবতী) থেকে পরিবর্তন করে তার নাম দেন যয়নব । এবং বলেন: “তােমরা আত্মস্তুতি করো না। আল্লাহহ জানন কে পুণ্যবান” ( সহিহ মুসলিম হাদিস নং ২১৪২)
দান্তিক ও অহংকারী শাসকদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ। শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান
আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি ।
৫. কুরআনের অস্পষ্ট অর্থবোধক নাম
একদল আলেম কুরআন শরীফের মধ্যে আগত অস্পষ্ট শব্দগুলাের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি। ( বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, হাদীস পৃষ্ঠা- নং ১/২৭)
৬. অপছন্দনীয় নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম দেওয়া
নাম রাখার ক্ষেত্রে নামের অর্থ, প্রয়োজন, বিধি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ রাখা একান্ত প্রয়ােজন। অসাবধানতা রাখা একান্ত প্রয়াজন। অসাবধানতা ও অজ্ঞতাবশত কোন অর্থহীন বা বিদঘুটে নাম রেখে ফেললে তা পরিবর্তন করে একটি সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা অবশ্য কর্তব্য। অর্থহীন বা অপছন্দনীয় নাম রাখা বাচ্চার জীবনে প্রভাব ফেলে। তাই অপছন্দনীয় নাম অথ্যাৎ মন্দ নাম রাখা থেকে আমাদের ভিরত থাকতে হবে।
হযরত আয়েশা রা হতে বর্ণিত হযরত তিনি বলেন: “রাসূল কারও মন্দ নাম পেলে তা পরিবর্তন করে দিতে”(ইমাম তিরমিজী জামিউত তিরমিযী হাদীস নং ২৮৩৯)
যদি কারাে নাম ইসলামসম্মত না হয়; বরং ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ এমন নাম তাহলে তা পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত।
মহিলা সাহাবী যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নাম ছিল বাব্রা (পূণ্যবতী) । তা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন তুমি কি আত্মতুষ্টি করছ? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামও পরিবর্তন করে যয়নব’ রাখলেন ।
নাম পরিবর্তন করা সাধারণভাবে জায়েয এবং সুন্দর করার জন্য খারাপ নামকে ভালো নাম দ্বারা পরিবর্তন করা সুন্নাত।ইমাম আবু দাউদ আবুদ্দারদা থেকে উদ্ধৃত করে বলেন : রাসূলুল্লাহ বলেছেন : কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও তোমাদের পিতার নামে ডাকা হবে । তাই তােমাদের নামসমূহ সুন্দর করো।
ওমর রা এর এক কন্যার নাম ছিলাে আছিয়া অর্থ- অবাধ্য নারী। রাসূল তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জামীলা (সুন্দরী)। হাদীসটি ইমাম মুসলিম উদ্ধৃত করেন (/১৬৮৭, আল হালাবী)।
এক নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণ একমত । বরং খারাপ নাম পরিবির্তন করে ভালাে নাম রাখা বাঞ্চনীয়, যা শরীয়ত উৎসাহ দিয়েছে।
৭. পূর্বের নাম পরিবর্তন করা যায় কিনা
আমাদের দেশে অনেকের ধারণা, সন্তানের নামকরণের পর তা আর পরিবর্তন করা যায় না। শিশুকালের নাম পরিবর্তন করা অশুভ। আসলে তা ঠিক নয়। নাম যাদি ভালাে, সুন্দর ও অর্থবহ না হয়, তাহলে নবী (সা.) তা অবশ্যই পরিবর্তন করে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম পছন্দ করতেন। কেউ তাঁর নিকট আসলে তিনি তার নাম জিজ্ঞেস করতেন। নাম পছন্দ হলে তিনি খুশী হতেন । আর অপছন্দ ও অর্থহীন নাম হলে তার মুখমগুলে বিরক্তর ভাব প্রকাশ পেত এবং আধিকাংশ সময় তিনি সঙ্গে সঙ্গে নাম পরিবর্তন করে দিতেন।
হযরত রায়তা বিনতে মুসলিম তার পিতা থেকে শুনেন ইসলামী ভালাে নাম রাখা যায় এবং রাখা উচিত। রাসূলুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে আমি রাসূলুল্লাহ সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলে বললাম, আমি বললাম গুরাব (কাক)। তিনি বললেন “না” তুমি ‘মুসলিম’।
অন্য একটি হাদীসে এসেছে
(সহীহ বুখারী ও আবু দাউদ) সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযেরত সাহল বিন সাদ আস সায়েদী উ আনই থেকে বর্ণিতি আছে, তিনি বলেন : আবু উসায়্যেদের থেকে বর্ণত আছে, তিনি বলেন : আবু উসায়্যেদের একপুত্র জন্ম গ্রহণের পর নবী সা নিকট নিয়ে আসা হলাে । তাকে রাসৃূলুল্লাহর নিকট নিয়ে আসা হলোে। রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ এ কোল কোলে বসালেন । কিছুক্ষণ পরে রাসূলুল্লাহ থেকে উঠিয়ে নেয়া হলো ।
তাঁর এ সময় আবু উসায়্যেদ তাঁর কোলে বসালেন। এ সময় আবু উসায়্যেদ সেখানেই বসে ছিলেন । তখন তাঁর সম্মুখে কোনো কিছু নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন। তাই আবু উসায়্যেদ তার ছেলেকে উঠিয়ে নেবার জন্য বললেন এবং শিশুটিকে রদিযল্লাহ তালা সেখানেই বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, শিশুটি কোথায়? আবু উসায়্যেদ বললেন, আমরা তাক ফেরত পাঠিয়েছি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তার নাম কি ? উসায়্যেদ বললেন, অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, না বরং তার নাম মুনযির (সততর্কারী) ।