তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় রাতে ঘুম না হলে জেনে নিন
আপনার কি রাতে ঘুম আসে না? আপনি কি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় খুঁজছেন? ঘুম একটি সুখের জায়গা। যার ঘুম নেই তার জীবনে শান্তি নেই। শান্তিময় জীবনের মূল চাবি হলো সুস্থ জীবন। আর সুস্থ জীবনের মূল চাবি হলো ঘুম।
একেক জন মানুষের একেক রকম ঘুম হয়। কারো ঘুম এত গভীর হয় যে তার উপর দিয়ে উড়োজাহাজ গেলেও টের পায় না। আবার কিছু মানুষের ঘুম এমন হালকা হয় যে, তার পাশ দিয়ে পিঁপড়া হেঁটে গেলেও পিঁপড়ার হাঁটার আওয়াজ পায়।
একটি সুস্থ, স্বাভাবিক, সুশৃঙ্খল এবং সুন্দর জীবন গঠনে প্রোডাক্টিভ ঘুমের বিকল্প কিছু নেই। অপরদিকে ঘুমের ঘাটতি হলে শরীরে তৈরী হতে পারে ক্যান্সার,ডায়াবেটিসের মতো জীবনহানি রোগব্যাধি। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের জীবনে ঘুমর গুরুত্ব অপরিসীম।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়
১.ঘুমানো আগে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন
একটু খেয়াল করে দেখুন , আমাদের শরীর যখন ক্লান্ত তাকে তখন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। ঘুমানো ২-৩ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করলে, ভালো ঘুমের আশা করা যায়। কেননা আমাদের শরীর যখন ক্লান্ত হয়ে আসবে তখন তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে। কোন ভাবেই ঘুমানোর আগ মূহুর্তে ব্যায়াম করা যাবে না। কারণ, আমরা যখন ব্যায়াম করি তখন আমাদের শরীরের কোষ,অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল হয়ে ওঠে। ঘুমানোর আগে সচল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্লান্ত হতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই, ব্যায়াম শেষে গোসল দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর ঘুমাতে গেলে প্রডাক্টিভ ঘুমের আশা করা যায়।
২.ঘুমানোর একটি নির্দিষ্ট সময় দির্ধারণ করুন
একেক দিন একেক সময়ে না ঘুমিয়ে, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেননা বডি ক্লক আমাদের নির্দিষ্ট স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঘুমানোর উৎসাহ দেয়। যখনই আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবেন, তখন আপনার বডি ক্লক স্বয়ংক্রিয় ভাবে এই সময়টিকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে নিবে।
ঠিক একইভাবে, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠাতে হবে। কেননা যদি ৮ ঘণ্টা প্রতিদিন ঘুমান। আর রাত ১০ টায় ঘুমানোর অভ্যাস করেন চান, তাহলে আপনাকে সকাল ৬ টায় উঠতে হবে। সকাল ৬ টায় না উঠে যদি ৭ অথবা ৮ টায় ঘুম থেকে উঠেন তাহলে, পরদিন ঘুমের ডিজঅর্ডার শুরু হবে।
৩. ঘুমানোর কক্ষ কোলাহল মুক্ত ও শীতল পরিবেশ রাখুন
রুক্ষ আবহাওয়া থেকে তুলনামূলক শীতল কক্ষে ভালো ঘুম হয়। ঘুমানোর কক্ষটি হতে হবে কোলাহল মুক্ত, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ। যেখানে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে। এবং যান্ত্রিক কোলাহল যেন সেখানে প্রবেশ না করে। শীতল পরিবেশ আপনার দ্রুত ঘুমাতে সহায়তা করবে।
গবেষণায় দেখা যায় যে,
১. রুমে থেকে বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না সেখানে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
২. বিছানা ময়লা যুক্ত থাকা যাবে না। কেননা ময়লা যুক্ত বিছানায় ফাঙ্গাস জন্ম নেয় যার কারণে শরীর চুলকায়, ফলস্বরূপ ভালো ঘুম হয় না।
৩. শয়নকক্ষে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস রাখা যাবে না এবং ঘুমানের আগে লাইট বন্ধ করা প্রয়োজন। কারণ এর ফলে মনোযোগ অন্যদিকে চলে যেতে পারে।
৪. দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করার অভ্যাস করা
ভালো ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত আলো বাতাস-পূর্ণ স্থানে দিনের বেলায় কাজ করা খুব প্রয়োজন। কেননা, মানুষের শরীরের মধ্যে বডি ক্লক(শরীরের ঘড়ী) থাকে। সাধারণত এই বডি ক্লকের নির্দেশ অনুসারে আমাদের বডি কাজ করে। আপনি যদি দিনে পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করেন, তাহলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে অর্থাৎ, আলো কমতে শুরু হলে শরীরের স্বয়ংক্রিয় ঘড়ির মাধ্যমে শরীর ঘুমের জন প্রস্তুতি নেয়। তাই আপনার ঘুম তাড়াতাড়ি আসার সম্ববনা বেড়ে যায়। তাই দিনের আলোতে থাকার চেষ্টা করুন।
আবার একটু ভেবে দেখুন আপনার ঘুমানোর রুমে যখনই সকালের আলো প্রবেশ করে, তখন কিন্তু আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অপরপক্ষে যে রুমে আলো প্রবেশ করে না, সেখানে কিন্তু আপনার ঘুম সকালে সহজে ভেঙ্গে যায় না। বডি ক্লকের সাথে দিনের আলোর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে ইউরোপের ২ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ এক ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছে। এর নাম হলো সিজনাল ইফেক্টিভ ডিজঅর্ডার। এর একমাত্র কারণ হলো, দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস না পাওয়া।
কেননা পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে ছয় মাস দিন আর ছয়মাস রাত থাকে। যার ফলে অনেকক্ষেত্রে বডি ক্লক দিন – রাতের তারতম্য পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়, যার কারণে ঐ অঞ্চলের মানুষের কাছে অর্থকড়ি অভাব না থাকা সত্ত্বেও ডিপ্রেশনে ভুগে।
তাছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নাইট শিফটে কাজ করে তাদের ৯৭℅ লোক কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়।
“ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার” এর তথ্য মতে,
যখন সূর্যের আলো থাকে না, তখন শরীরে কে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখতে বাধ্য করলে শরীরের মেলাটনিনি হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।
এই হরমোনের কাজ হলো, দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করা। ফলে, বিশেষজ্ঞদের ধারনা রাত জাগা মানুষের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। তাই, রাতে ভালো ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করা জরুরী।
৫. ক্যাফেইন যুক্ত খাবার ত্যাগ করতে হবে
যেসব খাবারে ক্যাফেইন আছে অর্থাৎ চা, কফি,কোকাকোলা এবং ভাজাপোড়া ঘুমানোর অন্ততপক্ষে ৬ ঘণ্টা আগে বন্ধ রাখতে হবে। এগুলো, গভীর ঘুমের জন্য কাঠা স্বরূপ। ক্যাফেইন আপনার শরীরের কোষ গুলোকে সক্রিয় করে। যার ফলে আপনার সহজে ঘুম আসে না। তাই ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকুন।
৬. তামাক ও এলকোহল গ্রহণ ত্যাগ করা
এলকোহল বা মদ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ঘুম চলে আসে ঠিক। কিন্তু, কোন প্রোডাক্টিভ ঘুম হয় না। এলকোহল গ্রহণ করার ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। যার ফলে আপনার মানসিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ওরোব্রিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন আছে। মদ পান করার ফলে, এই হরমোন উৎপাদিত হয় না। স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং পরবর্তীতে ঘুমের মারাত্মক সমস্যা হয়। তাই আজই তামাক ও এলকোহল ত্যাগ করুন।
৭.ঘুমানো আগে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করুন
ঘুমনোর আগে মোবাইল, ট্যাব,লেপটপ কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার না করা উচিৎ। ডিভাইস গুলোর নীল আলো চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যার প্রভাব ঘুমের মধ্যেও পরে।
তাই, ঘুমানোর ৩-৪ ঘণ্টা আগে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
৮. ঘুমানোর আগে গরম দুধ পান করার চেষ্টা করুন
ঘুমানোর আগে গরম এক গ্লাস দুধ পান করা যেতে পারে, স্বাস্থ্যমত ও প্রোডাক্টিভ ঘুমের জন্য এটা খুব উপকারী। তাছাড়া আপনার সুসাস্থের জন্য ও দুধ খুবই উপকারী
৯.তাড়াতাড়ি গুমানোর জন্য গুমানোর আগে বই পড়ুন
দ্রুত ঘুম আসার জন্য বইপড়া একটি কার্যকরী পদ্ধতি। কারো যদি শুয়ার পর ৫-১০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে । বই পড়লে সহজে ঘুম চলে আসে। কারণ, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে পড়লে চোখে ক্লান্তি চলে আসে। ফলে, দ্রুত ঘুম চলে আসে।
ভাল ঘুম আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে। কারণ, ঠিক মত ঘুম না হলে, আপনার মেজাজ খিট খিটে থাকবে, কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না। ক্ষেত্রে বিশেষ মাথাব্যাথা সহ ডায়বেটিসের মত রোগ দেখা দিবে।
১০. ৪-৭-৮ শ্বাস প্রশ্বাসের পদ্ধতি ব্যবহার করুন
ডক্টর অ্যান্ড্রু ওয়েইল যে “৪-৭-৮ ” পদ্ধতিটি বিকশিত করেছেন তা হল একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী শ্বাসপ্রশ্বাসের পদ্ধতি যা প্রশান্তি এবং শিথিলতাকে উৎসাহিত করে৷ এটি আপনাকে ঘুমানোর আগে শান্ত করতেও সাহায্য করতে পারে ।
এটি যোগব্যায়াম থেকে শেখা শ্বাস নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলির উপর ভিত্তি করে এবং এটি একটি শ্বাস প্রশ্বাসের প্যাটার্ন নিয়ে গঠিত যা স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে। আপনি যখন উদ্বিগ্ন বা চাপ অনুভব করেন তখন এটি অনুশীলন করা যেতে পারে।
এখানে পদক্ষেপগুলি রয়েছে
সুতরাং, তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করা শুরু করে দিতে পারেন। প্রয়োজনে শেয়ার করে প্রিয়জনদের জানিয়ে দিতে পারেন।