থানকুনি পাতার উপকারিতা ও ওষুধিগুণ সম্পর্কে জানুন এবং আপনার নলেজ বাড়ান

কারো হাত কিংবা পা কেটে গেলে বা পেটের কোনও সমস্যা হলেই খোঁজ পড়ে থানকুনি পাতার। কোনও একটা ঘর থেকে নিশ্চিত পাওয়া যেতই। এমনকী প্রাচীন আর্য়ুবেদ শাস্ত্রেও এই পাতার প্রচুর গুণাগুণ বর্ণিত রয়েছে।

অনেক ওষুধও তৈরি হত এই পাতার রস থেকে। কিন্তু এখন এই থানকুনি পাতার দেখা আর প্রায় পাওয়াই যায় না। এমনকী এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা থানকুনি পাতা চেনেও না। কিন্তু শরীরকে নানা দিক দিয়ে সুস্থ রাখতে এই পাতার জুড়ি মেলা ভার।

প্রতিদিন এই পাতার রস খেতে পারলে অন্যরকম কোনও চিন্তা থাকবেই না। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়,খ্রিস্টপূর্ব ১৭ শতক থেকেই আফ্রিকা, জাভা, সুমাত্রাতেও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই পাতা। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই পাতা বাটা খুবই উপকারী। দেখে নিন (Gotu Kola) থানকুনি পাতার উপকারিতা।

নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে পারলে তার উপকারিতা অনেক। কারণ প্রাকৃতিক এই সব উপাদানের কোনও বিকল্প হয় না। চলুন জেনে আসি থানকুনি পাতার উপকারিতা ও ওষুধিগুণ

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও ওষুধিগুণ

১. দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করা ও ক্ষত নিরাময়ে

যদি কোনো কারণে হাত কেটে যায়, দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে থানকুনি পাতা তাৎক্ষণিক সমাধান। থানকুনি পাতা বেটে কাটা জায়গায় লাগালে ব্যথা কম হবে আর রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকী ক্ষত থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে না।

২. শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে

অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। এছাড়াও অনেকের দেহেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সমস্যার উপশম হয়। হাত ফুলে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৩. রক্ত জমাট বেঁধে যায় না

থানকুনি পাতার মধ্যে থাকে নানা রকম খনিজ উপাদান, যা তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যে কারণে অনেক জটিল রোগ থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেওয়া একদম উচিত নয়। কারণ এর ফলে হার্ট, কিডনি ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়।

৪. শরীরের ভেতরের জ্বালাপোড়া কমায়

কোনও কারণে শরীরের ভেতরে কোনও ক্ষত হলে নানা রকম সমস্যা হয়। জ্বর, ক্লান্তি এসব আসতেই পারে। এর সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমনকী খিদে কমে যাওয়া, পেশির ব্যথা এগুলোও থাকে। থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা, যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়াও ক্লান্তি ভাব দূর হয়। সেই সঙ্গে অনেক রকম ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।

৫. অলসারের নিরাময়ে থানকুনি পাতা

পেটের যে কোনও রোগে থানকুনি পাতা খুব ভালো। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় এই পাতার গুণেই। আর নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। ক্রনিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে খুবই ভালো থানকুনি পাতা।

৬. মানসিক অবসাদ কমায়

যাঁরা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।

৭. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে

নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো। এই কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের থানকুনি পাতার রস (Centella Asiatica) খাওয়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকী অ্যালঝাইমার্সের ওষুধও তৈরি হয় এই পাতার রস থেকেই।

১০. ঘুমের সমস্যা দূর করে থানকুনি পাতা

ঘুম হয় না? রাতের পর রাত জেগে কাটান? তাহলে প্রতিদিন সকালে উঠে থানকুনি পাতা ভেজানো জল খান। স্নায়ু শিথিল হবে। ঘুম আসবেই।

১১. ডিটক্সিফিকেশন

গাজর কিংবা পাতিলেবুর রস শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। কিন্তু থানকুনি পাতা যে খুব ভালো ডিটক্সিফিকেশন করে তা কি জানতেন? প্রতিদিন থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু, মিশিয়ে খান। যাবতীয় টক্সিন বেরিয়ে যাবে। শরীর থাকবে ফুরফুরে।

৩৫টি ওষুধি গাছের নাম ও ওষুধি গুণগুণ সম্পর্কে পড়ুন

ইংরেজিতে গল্প পড়তে পারেন