কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙ্গালী। হাজার বছর দরে এই দ্বারা চলে আসছে বাংলার জনপদে। এমন একটি দিনও যায় না যেদিন বাঙ্গালি জাতি ভাত না খেয়ে ঘুমাবে। চলুন আজ আমরা বাঙ্গালীর ভাতের ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে আপনাদের জানাব।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাবার হল ভাত । যারা নিয়মিত ভাত খান তারা ভাত খেলে মোটা হয়ে যাবেন বা এর ক্ষতি অনেক এরকম চিন্তা ভাবনা বাদ দিন। ভাত যেমন সহজে রান্না করা যায় তেমনি ভাত খেলে পেট ভরাও থাকে অনেকক্ষণ।
ভাতের কিছু পুষ্টিগুন
ভাত নিয়ে আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে, ভাত খেলেই ওজন বেড়ে যায় দ্রুত। কিন্তু এ ধারণা একেবারে ভুল। ভাত কার্বহাইড্রেটের উৎস হলেও এতে চার থেকে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন থাকে কিন্তু কোন ফ্যাট নেই। ভাত ভিটামিন বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস।
ভাতের উপকারিতা
১. ভাত রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে
সাদা ভাতের যে মাড় রয়েছে তাতে উচ্চতর মাত্রায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে। যখন কোন খাবারের সাথে আপনি ভাত খান যেমন সবজির সাথে যদি ভাত খান তবে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ভাত। তবে আপনার যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তবে আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন। ডায়াবেটিস হলে আপনার খাবার তালিকায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
২. গ্লুটন ফ্রি
আঠালো-মুক্ত ভাত একটি হাইপোলোর্জিক খাবার এবং অনেকের জন্য বিষয়টি আশীর্বাদ। আবার যাদের ভাত পচ্ছন্দ না তারা সহজেই আটা,নুডলস,রুটি খেতে পারেন। এগুলো ভাতের বিকল্প।
৩. বাঙ্গালীর শক্তি সরবরাহের প্রধান উৎস ভাত
ভাত যেহেতু কার্ব হাইড্রেটের উৎস তাই একে শক্তিঘরও বলা হয়। ভাত খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি আসে।
৪. হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
আপনি যদি আপনার আদর্শ খাবার হিসেবে ভাত বেছে নেন তাহলে আপনার হার্ট ভালো থাকবে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ভাত রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও কমিয়ে দেয়।
৫. ভাত খুব সহজে হজম হয়ে যায়
ভাত সহজপাচ্য হওয়ায় খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। শুধু রান্না করা সহজ নয়, ভাত হজম করাও খুব সহজ। বাদামি চালে যেমন ফাইটিক অ্যাসিড নামে একটি যৌগ থাকে সাদা ভাতে তা থাকে না যা হজমে সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া ভাত খেলে ঘুমও ভালো হয়।
৬. অন্ত্রের সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়
সাদা ভাত খাওয়ার সময় আপনি দ্রবণীয় ফাইবারের একটি বিশাল ডোজ পেয়ে যাবেন বাটায়ারেট নামক প্রতিরোধী স্টার্চে। এই বাটায়ারেট আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে। এজন্য ডায়রিয়া হলে বেশিরভাগ সময় সিদ্ধ চাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভাতের অপকারিতা
আমাদের জাতীয় জীবনের উন্নতি-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির পথে সবচেয়ে বড় বাধা কি জিজ্ঞাসা করলে একেক জন একেক উত্তর দিবেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যদি বিবেচনা করেন, তবে আমি বলব ভাতই আমাদের এক নম্বর জাতীয় শত্রু।
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি
চাল বা ভাত এমন একটি প্রধান খাদ্য যাতে চিনি (শর্করা/ শ্বেতসার/ carbohydrate) বেশী পরিমাণে থাকে। ফলে আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি বা যৌবন প্রাপ্তি ঘটে খুবই দ্রুতগতিতে। ফলে আমরা বিয়ে করি দ্রুত এবং বাচ্চা নেওয়া হয় দ্রুত। অর্থাৎ ভাত খাওয়া আমাদের ভয়ঙ্কর গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় মুল কারণ।
বিশ্বাস না হলে চীন-ভারত-ইন্দোনেশিয়া-জাপান-কোরিয়া প্রভৃতি ভাত খাওয়া দেশের দিকে তাকাতে পারেন, প্রতিটি দেশই জনসংখ্যার ভারে বিপর্যস্ত। জনসংখ্যার কল্পনাতীত বিস্ফোরণের কারণে সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও আমাদের সকলের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না।
২. দ্রুত বার্ধক্য হওয়া
ভাত আমাদের কেবল দ্রুত যৌবন প্রাপ্তিই ঘটায় না, পাশাপাশি আমাদেরকে ফটাফট্ বুড়ো-বুড়িতেও রূপান্তরিত করে থাকে। ফলে আমরা তাড়াতাড়ি অকর্মণ্য হয়ে পরিবার-সমাজ-দেশের বোঝায় পরিণত হয়ে যাই। কেননা বুড়ো হলে একদিকে কাজ করার শক্তি কমে যায়, অন্যদিকে অসুখ-বিসুখে একেবারে কাবু করে ফেলে।
এটা ঠিক যে, চিনি/শর্করা/শ্বেতসার/কার্বোহাইড্রেট আমাদের সকল শক্তির মূল উৎস এবং এগুলো ছাড়া আমরা অচল। আবার এটাও সত্য যে, শরীরে অতিরিক্ত (চিনি/শর্করা/শ্বেতসার) কার্বোহাইড্রেটের সরবরাহ আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। বিষয়টিকে পানির সাথে তুলনা করলে সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত হয়। আমরা সবাই জানি যে, স্বাভাবিক পানি আমাদের বেঁচে থাকার মূল কারণ আবার বন্যার (অতিরিক্ত) পানি আমাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে।
৩. ঘনঘন অসুস্থ হওয়া
আমাদের দেশে শতকরা ৯০ ভাগেরই দেখা যায় গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা আছে। ভাতে থাকা অতিরিক্ত চিনি থেকেই পেটে গ্যাস হয়, গ্যাস থেকে হয় এসিডিটি এবং এসিডিটি থেকে হয় আলসার।
৪. ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়া
ভাত খাওয়া (অর্থাৎ ভাত খাওয়ার মাধ্যমে বছরের পর বছর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত চিনি সরবরাহ করা) যে ডায়াবেটিস হওয়ারও সবচেয়ে বড় কারণ, সেটি নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না। রুটি যে-সব দেশের প্রধান খাদ্য, সে-সব দেশে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, সেখানে ডায়াবেটিস এবং গ্যাসট্রিক আলসারের কোন মহামারী নাই।
৫. দ্রুত ক্লান্ত ও অবসাদ আসা
ভাত নয় বরং অলসতাই হলো আমাদের জাতীয় উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে প্রধান বাধা তবে তা পুরোপুরি ঠিক নয়। ভাতই আমাদের দেহ-মনে অলসতা সৃষ্টি করে। ভাতের মধ্যে থাকা মাত্রাতিরিক্ত চিনি / শ্বেতসার অলসতার একটি মুল কারণ। আমরা যে সামান্য একটু পরিশ্রম করলেই দুর্বল হয়ে পড়ি, ভাতে থাকা মাত্রাতিরিক্ত সুগারই ইহার জন্য দায়ী।
ভাতে যেহেতু প্রচুর চিনি থাকে এবং ভাত দ্রুত হজম হয়ে তার মূল খাদ্য উপাদান শোষিত হয়ে রক্তে চলে যায়, সেহেতু ভাত খাওয়ার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই হঠাৎ করে আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের মতো ঘুমঘুমভাব, দুর্বলতা, অলসতা অনুভব করতে থাকি।
এইছাড়া আবহাওয়াজনিত কারণে আমাদের শরীর ঘামায় বেশী এবং ঘামের সাথে প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ বেড়িয়ে যাওয়ার কারণে আমরা সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ি। এক্ষেত্রে ভাত এবং ঘামানো দুটোই আমাদের অলসতা-দুর্বলতা-কর্মবিমুখতার জন্য সমানভাবে দায়ী।
৬. ভাত একপ্রকার অপচয়
ভাতই আমাদের দুরারোগ্য দারিদ্রের মুল কারণ। কেননা ভাত গলা পর্যন্ত খেলেও দুই ঘণ্টার মধ্যেই হজম হয়ে যায়। ফলে (ভাত) খেতে হয় প্রচুর এবং এজন্য খাওয়ার পেছনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাধ্য হয়ে ব্যয় সঙ্কোচন করতে হয়।
৭. দ্রুত ক্যালরি হারানো
আর ইহার জন্য দায়ী এই কুলাঙ্কার ভাত। ভাত খাওয়া চীনা, ভারতীয় আর ইন্দোনেশিয়ানদের স্বাস্থ্য দেখেন আর রুটি খাওয়া এরাবিয়ান, ইউরোপীয়ান ও আমেরিকানদের স্বাস্থ্য দেখেন, তাহলেই ভাতের মহিমা বুঝতে পারবেন। ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদির মতো পরিশ্রম সাধ্য খেলাগুলোতেও দেখবেন ভাত খাওয়া দেশের ছেলে-মেয়েরা তেমন সুবিধা করতে পারে না। কারণ একটাই আর তাহলো ভাত খেলে অল্প সময়ের জন্য প্রচুর শক্তি (ক্যালরি) সাপ্লাই পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরই রক্তে ক্যালরির সাপ্লাই একেবারে বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
আমাদের পরামশ
রুটি খেলে সেটি ধীরে ধীরে হজম (অর্থাৎ রক্তে শোষিত) হয়, ফলে রক্তে এনার্জি/ ক্যালরির মাত্রা একই রকম থাকে দীর্ঘ সময় যাবত। ভাতের মতো অল্প সময়ের জন্য ভীষণ বেড়েও যায় না এবং তারপর একেবারে মুশকিলে ফালানোর মতো কমেও যায় না। আমরা যদি ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে দ্রুত রুটি খাওয়ায় অভ্যস্ত না হই, তবে সরকার দীর্ঘদিন যাবত ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের পেছনে যে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করছে, তা আরো কত যুগ চালিয়ে যেতে হবে আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
অথচ আরবদেশ, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা প্রভৃতি রুটি খাওয়া দেশের সরকারগুলো দম্পতিদের হাজার হাজার মিলিয়ন ডলার বোনাস দিয়েও তাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারছে না। কোন কোন বিশ্লেষক মনে করেন যে, ভাত নয় বরং অশিক্ষা এবং দারিদ্রের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাহলে আরব দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন, তাদের শিক্ষার হার অনেক কম তারপরও তাদের জনসংখ্যার বিষ্ফোরন নাই। এমনকি কয়েক দশক পূর্বে যখন তারা দরিদ্র ছিল, তখনও তাদের জনসংখ্যার কোন সমস্যা ছিল না। ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে আপনার কেমন লাগল তা আমাদের জানাবেন । ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।