ইউটিউবে ভিউ বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানার আগে আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রয়োজন। আপনার যদি ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।

আপনি কি জানেন, কিভাবে ইউটিউবে ভিউ বাড়বে? অধিকাংশ মানুষ ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করে যাচ্ছে, কিন্তু কোন ভিউ পাচ্ছে না। এই লেখাটি মূলত ইউটিউব ভিউ বৃদ্ধি করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হলো প্রযুক্তি। কথায় আছেন “প্রযুক্তি দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে যে ওতোপ্রোত জড়িয়ে আছে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা।প্রযুক্তিতহীন বিশ্ব তাই, এক মুহূর্ত কল্পনা করা অসম্ভব।

একসময় একসাথে ছবি দেখা ও সাউন্ড শুনে বিনোদন গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষ শুধুমাত্র টেলিভিশন ব্যবহার করতো। কিন্তু, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষ এখন ইউটিউবের দিকে তুলনামূলক বেশি আগ্রহী হচ্ছে। ইউটিউবে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি খুব অল্প সময়ে যেমন ভিডিও দেখতে পারবেন, নিজের চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করে আপনি ও আয় করতে পারবেন।

আজকাল সকলের কাছে রয়েছে বাধাহীন ইন্টারনেট কানেকশান এবং এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, লেপটপ ডেস্কটপ এখন ঘরে ঘরে । প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতন সকলেই তাই, সকলের হাতে হাতে রয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক নানা ধরণের গেজেট। বর্তমানে মানুষ ইউটিউবের প্রতি এতটাই আস্থা অর্জন করেছে, যে আজকাল সকলের রয়েছে ইউটিউবে চ্যানেল। যেহেতু, এখন ইউটিউব থেকে আয় করা যায় তাই সকলে নিজের চ্যানেলে তৈরী করে স্বপ্ন দেখছে আয়ের।

ইউটিউবে ভিউ বাড়ানোর উপায়

কিন্তু, শুধু একটি চ্যানেল থাকলে আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন তা কিন্তু নয়। বরং ইঊটিঊবে এ আয় করতে হলে আপনাকে ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও এর ভিউ বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে। তবেই আপনি আয় করতে পারবেন। কিন্তু, আমরা অনেকে জানিনা কিভাবে ইউটিউবে ভিউ বাড়বে। আজ আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব।

১. উপযুক্ত কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে

ইউটিউবে ভিউ বাড়ানোর উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এসইও করা। যার জন্য আপনাকে উপযুক্ত কি-ওয়ার্ড বেঁচে নিতে হবে। যারা ইউটিউবে সম্পর্কে জানেন কিংবা বুঝেন তারা অবশ্যই জানেন যে, এসইও করার ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড এর ভূমিকা কতখানি। পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউটিউব ভিউ পেতে কিংবা উপযুক্ত পরিমান ভিউ পেতে, যেকোনো ভিডিও এর মধ্যেই এসইও করতেই হবে। আপনি যে ধরণের যে বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরী করুন না কেন, আপনাকে অবশ্যই ভিডিও এর সাথে সামাঞ্জস্যই রেখে কিওয়ার্ড ভিডিও এর ডিসক্রিপশন বাড়ে এড করে নিতে হবে।

ইউটিউব কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার কিছু ফ্রি টুলস

১. ইউটিউব (YouTube অটো সাজেশন, এটা কিছু লিখলে দেখবেন ঐ সম্পর্কিত অনান্য টাইটেল দেখায়।)
২. টিউব-বাডি (TubeBuddy)
৩. ভিড়আইকেউ (vidIQ)
৪.কীওয়ার্ড টুল.ওএই (KeywordTool.io)
৫. গুগল ট্রেন্ডস (Google Trends)

প্রথম ধাপ : আপনাকে অবশ্যই অধিক সার্চ যুক্ত কি ওয়ার্ড নির্বাচন করুন

কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে ভিডিও সাথে সামঞ্জস্য রেখে, তা প্রায় আমরা সকলে জানি। কিন্তু, আমাদের এমন কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে যেগুলো কোনো ভিডিও সার্চ করার সময়, গ্রাহকরা বেশি ব্যবহার করে থাকে।

আপনাকে সেই ওয়ার্ড গুলো খুঁজে বের করে তা আপনার ভিডিও এর সাথে সামঞ্জস্য করে ব্যবহার করতে হবে। আজকাল অনেক ধরনের এপ্লিকেশন রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি এমন অনেক সার্চযুক্ত কি ওয়ার্ড খুঁজে নিতে পারবেন এবং সেই সাথে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন :

১. টিউব-বাডি (TubeBuddy)
২. ভিড়আইকেউ (vidIQ)

২য় ধাপঃ আপনার টাইটেলে কি ওয়ার্ড ব্যবহার করুন

আপনি যে ধরণের ভিডিও তৈরী করেন না কেন, ইউটিউবে আপলোড দেওয়ার সময় আপনাকে একটি টাইটেল অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সেই টাইটেল দেওয়ার সময় আপনার কিওয়ার্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরি করে নিতে হবে। কারণ, ইউটিউব এলগোরিদম আপনার ভাষা বুঝবে না। কিন্তু, যদি ভিডিও এর টাইটেল কিওয়ার্ড এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহার করেন তাহলে, খুব সহজে ভিডিও এর ভিউ বাড়াতে পারবেন।

ইউটিউবে যদি “ আচার বানানোর উপায় ” এই কিওয়ার্ড বেশি সার্চ হয় এবং আপনার ভিডিওটি এই সম্পর্কে হয়। তাহলে, টাইটেলে ”আচার বানানোর উপায়” শব্দটি রাখতে হবে। তাহলে টাইটেল হতে পারে, দেখুন বাসায় আচার বানানোর উপায়?

কিভাবে ইউটিউবে ভিউ বাড়বে? এর ৩০% সমাধান আপনি সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে করতে পারবেন।

২. হ্যাশ ট্যাগ যুক্ত করুন

আপনি যে ধরণের ভিডিও আপলোড করুন না কেন ভিডিও তখনি হিট হবে যখন ভিডিওটির ভিউ বাড়বে। তাই যে ধরণের ভিডিও আপলোড দিন না কেন ভিডিও এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনাকে প্রয়োজনীয় ট্যাগ সিলেক্ট করতে হবে,যাতে করে ইউটিউবে কেউ কোনো ভিডিও সার্চ করলে সেই সার্চের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ করে আপনার ভিডিওটি রিকোমেন্ডেশনে চলে আসে। তবে অবশ্যই ভিডিও এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ট্যাগ যুক্ত করে তা ডেসক্রিপশন বারে যুক্ত করতে হবে। যেমন: #trending #top১০

হ্যাশ-ট্যাগ কিভাবে ব্যবহার করবেন

১. টাইটেল এবং ডিসক্রিপশনে ব্যবহার করার যাবে।
২. ডিসক্রিপশনে আপনে যতগুলোই হ্যাশ-ট্যাগ দেন। টাইটেলের উপরে ৩টাই দেখাবে।
৩. হ্যাশ-ট্যাগে স্পেস দিলে ঐটা আর হ্যাশ ট্যাগ থাকবে না। যেমন: যদি #আচার রেসিপি লিখেন তাহলে হ্যাশ-ট্যাগে শুধু বাংলা থাকবে। তবে #আচারেররেসিপি লিখেন তাহলে কাজ করবে।
৪. ভিডিও সাথে যায় না, অশ্লিল এবং স্পাম কমেন্ট ইউটিউবের নীতিমালার বিরুদ্ধে। সুতরাং, হ্যাশ-ট্যাগ দেয়ার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।

৩. আকর্ষনীয় থাম্বনেইল ব্যবহার করতে হবে

আপনার ভিডিওতে অবশ্যই থাম্বনেইল ব্যবহার করবেন। একটি থাম্বনেইল আপনার ভিডিও এর রিচ বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ভালো থাম্বনেইল ছবিতে হয় কোয়ালিটির ইমেজ যুক্ত করে এবং সেই সাথে আপনার ভিউ বৃদ্ধি করতে ভূমিকা পালন করবে।

ইউটিউব থাম্বনেইলের সাইজ ও ফরমেট

১. থাম্বনেইল সাইজ: 1280x720px
২. সর্বনিম্ম থাম্বনেইল সাইজ: 640x360px
৩. আদর্শ ইমেজ রেশিও: 16:9
৪. ইমেজ ফরমেট: JPG, GIF, BMP, or PNG
৫. সর্বোচ্চ ফাইল সাইজ: 2MB

আকর্ষনীয় থাম্বনেইল ব্যবহারের কৌশল নিন্মরূপ

১. থাম্বনেইলে টেক্স রাখুন।
২. টিউটরিয়াল, রিসিপি, ট্রাভেল ব্লগ বা যেখানে আপনার নিজের উপস্থিতি আছে সেখানে নিজের ছবি ব্যবহার করুন।
৩. থাম্বনেইলে ছবিগুলো বড় আকারে বা কাছে থেকে দেখান।
৪. ভিডিও, আকর্ষনীয় বা লোভনীয় অংশটি থাম্বনেইলে ব্যবহার করুন।
৫. অ্যাকশন শট ব্যবহার করুন।

৪. দর্শক চাহিদাসম্পন্ন টাইটেল নির্বাচন করতে হবে

আপনাকে সবসময় ভিডিও যুক্ত করতে ছোট একটি টাইটেল কিংবা শিরোনাম যুক্ত করতে হবে। তবে টাইটেল যুক্ত করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আকর্ষণীয় মানের টাইটেল বেছে নিতে হবে।

একটি আকর্ষণীয় টাইটেল বেছে নিতে আপনাকে সবার আগে উইনিক কোন শিরোনাম না টাইটেল বেছে নিতে হবে। মনে রাখবেন যত বেশি আকর্ষনীয় টাইটেল বেছে নিবেন টাইটেল দেখে মানুষ আপনার ভিডিও দেখতে আসবে।

চাহিদাসম্পন্ন টাইটেল নির্বাচন করার কৌশল

১. কিওয়ার্ডটি প্রথমে রাখার চেষ্টা করুন।
২. সংখ্যা যোগ করতে পারেন। যেমন: পৃথিবীর সেরা ১০টি ভয়ংকর জায়গা।
৩. টাইটেল ছোট রাখার চেষ্ঠা করুন।
৪. নজরে আসতে পারে এমন শব্দটি ব্রাকেটের মধ্যে রাখুন।

৫. ভিডিও ব্যাকলিংক করুন

ঠিক যেভাবে আমরা যেকোনো ব্লগিং এর ক্ষেত্রে ব্যাকলিংক ব্যবহার করে থাকি। তেমনি করে ইউটিউবের ভিডিওতেও আপনাকে ব্যাকলিংক করতে হবে। ব্যাকলিংক ব্যবহারের ফলে ইউটিউবের সার্চ এলগোরিদম আপনার ভিডিও অনেক বেশি জনপ্রিয় মনে করবে এবং সেই সাথে তা সার্চ বাড়ে সবার উপরে চলে আসবে।

এই টেকনিক ভিউ বাড়াতে ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও, যেকোনো ধরণের ব্যাকলিংক ভিডিও এর অধিক ভিউ বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে। ব্যাংকলিংক থাকলে আপনার চ্যানেলের ভিডিও কেউ ব্যবহার করতে পারবেনা এবং সেই সাথে কপিরাইটের জামেলা এড়ানো যাবে। এর ফলে আপনার ভিউ বাড়তে শুরু করবে।

৬. ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরি করুন

মনে রাখতে হবে আজকাল ইউটিউবারের অভাব নেই। তাই, আপনি যদি নিজেকে বাকি ইউটিউবার থেকে আলাদা করতে চান তাহলে, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই উন্নত এবং ভিন্ন মানের কন্টেন্ট তৈরী করতে হবে।

যাতে মানুষ বাকি সব ইউটিবার থেকে আপনার বিশেষত্ব বুঝতে পারে। কন্টেন্ট হলো একটি ভিডিও এর প্রাণস্বরূপ। তাই সবসময় কন্টেন্টকে আকর্ষনীয় করে তোলার চেষ্টা করুন। এতে দিন শেষে আপনার লাভ হবে।
৭. স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে হবে

আপনি যত ভালো ভিডিও বানান বা ভালো কন্টেন্ট ক্রিয়েট করেন না কেন। যদি সঠিকভাবে প্রচার না করা হয় তাহলে, কেউ কখনো জানতেই পারবেনা। আজকাল মানুষ দিনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করে স্যোশাল মিডিয়াতে।

তাই, আপনাকে প্রচারের জন্য বেছে। নিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়াকে। এতে আপনার ভিডিও অনেক ভিউ পাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। জনপ্রিয় কিছু স্যেশাল মিডিয়া হল:

১. ফেইসবুক
২.টুইটার
৩. লিঙ্কেডিন
৪. পিন্টারেস্ট
৫. কোরা
৬. ইনস্টাগ্রাম

এই ছিল আজকে কিভাবে ইউটিউবে ভিউ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আমাদের আলোচনা । আশা করি, নিজের ভিডিওকে সকলের পছন্দের তালিকায় উঠিয়ে আনতে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলবেন।

আপেল ম্যাক এর জন্য ফ্রি ফটোশপ চান 

এই পোস্ট টি ইংলিশ অনুবাদ পড়তে পারবেন